সৈকত মাইতি, তমলুক: বাড়ির একমাত্র রোজগারে ছেলে। অসহায় মায়ের অসুস্থতার কথা শুনেই সাইকেল নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় চণ্ডীপুর বাজারে ওষুধ আনতে। কিন্তু তাঁর আর মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না। ১১৬ বি জাতীয় সড়কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ে একটি বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারালেন চণ্ডীপুরের ইসরাফিল খান (৩০)।
বাবা শফিউদ্দিন খান। পেশায় ভ্যানচালক। ইসরাফিলকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে অভাব অনটনের মধ্যেও সুখের সংসার। পেশায় ইসরাফিল রাজমিস্ত্রির শ্রমিক। এদিক ওদিক করে যা রোজগার হত, তা দিয়েই তাঁদের সংসার চলত। বাড়িতে রয়েছেন মা সায়রা বান বিবি, স্ত্রী মদিনা এবং একমাত্র ছেলে ফিরদৌস। ফিরদৌস আবার স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তাই ছেলের পড়াশোনার খরচ এবং অভাবের সংসার সামলেও যেটুকু সঞ্চয় হয়েছিল তা দিয়েই সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতেই একখানা পাকা বাড়ি তৈরি করেছিল ইসরাফিল। এমন অবস্থায় মা সায়রা বানুর প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রণার কথা শুনে সাইকেল চালিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাজারে ওষুধ আনতে। স্বাভাবিক কারণেই বাড়ির একমাত্র রোজগরের ছেলের এহেন পরিণতিতে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে অভাবী ওই পরিবারের। শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকাজুড়ে।
শুক্রবার তমলুকের জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর কাঁথি থেকে দেহ নিয়ে এসে সন্ধ্যে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় গ্রামের বাড়িতে। বাড়ির একমাত্র ছেলের এমন মর্মান্তিক পরিণতি যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কেউই। ঘনঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন মা সায়রা বানু। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী মদিনা। শোকে পাথর বাবা শফিউদ্দিন। খাওয়াদাওয়া প্রায় ছেড়েছেন সকলেই। ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, “আমার একমাত্র তরতাজা ছেলের এমন পরিণতি হবে সেটা কখনো ভাবিনি। দুর্ঘটনার পরেও যেভাবে ছেলেকে ওরা ফেলে পালালো তা কী করে হতে পারে? আমরা গরিব বলে কী এমনটা হল?”
তমলুক মেডিক্যাল কলেজে দেহ নিতে যান মৃতের আত্মীয় সানোয়ার আলি খান। তিনি বলেন, “মায়ের প্রচণ্ড শরীর খারাপের কথা শুনে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও এক দৌড়ে সাইকেল চালিয়ে ওষুধ আনতে বাজারে গিয়েছিল ইসরাফিল। আর তারপর এমন পরিণতি। আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।” মৃতের আরেক আত্মীয় শেখ মতি বলেন, “এ যেন আমাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাত। এক নিমিষেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল ভিআইপির কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায়। আমরা এর উপযুক্ত তদন্ত চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.