পলাশ পাত্র, কৃষ্ণনগর: এশহরের সবেতেই রাজার খেয়াল। মাতৃ আরাধনা এর বাইরে যাবে কেন। মালো অর্থাৎ জেলেরা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যেতেন। তাদেরও সাধ হল জগদ্ধাত্রী পুজো করার। রাজাও মেনে নিলেন কথা। কিন্তু পুজোর খরচ মিটবে কী করে। কৃষ্ণচন্দ্র রায় মালোদের দিলেন ১১ টাকা। সেই নিয়মে আজও রাজবাড়ি থেকে যায় ১১ টাকা। এই অর্থ না এলে মালোপাড়ার বারোয়ারি পুজোই শুরু হয় না।
[‘আরাধনা’ দেখেই জগদ্ধাত্রী বন্দনার আয়োজন কৃষ্ণনগরের জজকোর্ট পাড়ায়]
বর্তমান সময়ের নিরিখে ১১ টাকা সত্যি কিছুই নয়। তবে একসময় এই অর্থের মূল্য অনেকটাই ছিল। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসারে এবং রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীকে জলঙ্গি নদীতে ভাসানের সময় মালোদের সাহায্য করতে পুরস্কার হিসাবে এই অর্থ দিয়েছিলেন। মালোপাড়ার পুজোর ইতিহাস বলতে গিয়ে একথা বলছিলেন পুজো কমিটির কর্তা জয়দেব হালদার, জগন্নাথ হালদার, নিতাই হালদাররা। তাদের কথায়, কৃষ্ণনগরের অন্যতম প্রাচীন পুজোগুলির অন্যতম মালোপাড়া। প্রায় ২০০ বছর বয়স হয়ে গেল জলেশ্বরী মায়ের। জানা যায়, জোড়া নৌকার মাঝখানে রাজরাজেশ্বরীকে রেখে এক অদ্ভুত কায়দায় মালোরা দেবীকে ভাসান দিতে নিয়ে যেতেন। এভাবে দীর্ঘদিন চলে আসার পর এলাকার মৎস্যজীবীরা তাদের পাড়ায় পুজোর জন্য রাজার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পুজোর প্রচারে এবং অনুগত প্রজাদের কথা রাখতে জগদ্ধাত্রী আরাধনার অনুমতি দেন। রাজবাড়ি থেকে প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাঠ এবং পুজোর খরচের জন্য দেন ১১ টাকা। আজও সেই ধারা অব্যাহত।
[সাবেকি প্রতিমার সঙ্গে থিমে সুন্দর ষষ্ঠীতলা বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী]
জয়রামবাটিতে সারদা মায়ের মা শ্যামা সুন্দরীদেবী যে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেছিলেন, সেই প্রথা মেনে মালোপাড়া বারোয়ারির পুজো শুরু হয়। অষ্টমীর রাতে অধিবাসের সময় ছেলেরা মহিলাদের বেশে জল সাজার অনুষ্ঠান করেন। জল ও জাল নিয়ে মৎস্যজীবীদের কাজ উঠে আসে অনুষ্ঠান। তাই মালোপাড়ার প্রতিমার অপর নাম জলেশ্বরী। বলছিলেন পুজো কমিটির সম্পাদক শ্যামল হালদার। সাবেকি ঘরানার সুষমা মণ্ডিত এই প্রতিমার মুখে আলাদা এক মাহাত্ম্য বিরাজ করে। প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন চঞ্চল পাল। পুজো মণ্ডপে থাকা গ্যাসবাতি দেবীমূর্তিকে আরও দ্যূতিময় করে তোলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.