শংকর আঢ্য। ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: রেশন বন্টন দুর্নীতির টাকা নাকি পৌঁছে যেত সোনা পাচারকারীদের হাতে। সোনা পাচারের মাধ্যমে রেশন বন্টন দুর্নীতির বিপুল টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। ইডির গোয়েন্দাদের অভিযোগ, সোনা পাচারকারীদের হাতে দুর্নীতির টাকা দেওয়ার পিছনে রয়েছেন বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য (Sankar Adhya)। ইতিমধ্যেই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। এবার শংকরের এক আত্মীয়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন ইডির গোয়েন্দারা। সোমবার এই ব্যাপারে মধ্য কলকাতার কলিন্স স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিটে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু তথ্যও পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। এদিকে, মঙ্গলবার শংকর আঢ্যর মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্যকে ইডি তলব করে। এর আগে শংকরের মা, স্ত্রী ও ছেলেকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, নিউ মার্কেট এলাকার মার্কুইস স্ট্রিটে শংকর আঢ্যর নিজস্ব অফিসে ফোরেক্স সংস্থার সন্ধানে তল্লাশি চালানো ছাড়াও কলিন্স স্ট্রিটে আরও একটি ফোরেক্স বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অফিসে ইডি তল্লাশি চালায়। ওই অফিসটির মালিক শংকর আঢ্যরই এক আত্মীয়। যদিও ইডির কাছে খবর, সংস্থাটির রাশ ছিল শংকরের হাতেই। কলিন্স স্ট্রিটের একটি চারতলা বাড়ির একতলায় রমরমিয়ে চলা ওই অফিসটি শংকর আঢ্য গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও ইডির কাছে আসা খবর অনুযায়ী, সিল করে দেওয়া এই অফিসটির সঙ্গে ছিল কয়েকজন সোনা পাচারকারীর যোগ। সেই সূত্র ধরে ইডির গোয়েন্দারা জেনেছেন যে, মধ্য প্রাচ্য থেকে মূলত বাংলাদেশ হয়ে পাচার হওয়া সোনার বিস্কুট বা সোনার বাটের একটি বড় অংশ এসে পৌঁছয় উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও তার আশপাশের অঞ্চলে। ওই সোনা পাচারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ ছিল শংকর আঢ্যর হাতে। অভিযোগ, সোনা পাচারকারীদের মাধ্যমে শংকরই বনগাঁ থেকে ওই সোনা কখনও ট্রেন, আবার কখনও বা সড়কপথে পাচার করতেন কলকাতায়। সেই সোনা তাঁরই এক আত্মীয়ের লোকজন কলকাতায় বসে নিতেন। পোস্তার সোনাপট্টিতে পাচার হত সেই সোনা। বাকিবুর রহমানের মতো রেশন বন্টন দুর্নীতির মূল অভিযুক্তরা রেশনের চাল ও গমের টাকা পাঠাতেন শংকর আঢ্যকে। ওই দুর্নীতির টাকার বদলে বিদেশ থেকে সোনা পাচার করা হত। বিদেশে সোনার মূল্য মেটাতে হয় ডলারে।
শংকর আঢ্য ও তাঁর আত্মীয়দের ফোরেক্স সংস্থার মাধ্যমেই রেশন দুর্নীতির টাকা ডলারে পরিণত করা হত। সোনা পাচারের সেই টাকা ডলারে পাঠানো হত বিদেশে। বাংলাদেশ হয়ে সেই ডলার পৌঁছে যেত মধ্য প্রাচ্যে। মার্কুইস স্ট্রিট বা কলিন্স লেনের পরিবহন সংস্থার কাছ থেকে বিদেশে যাত্রীদের পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্রের নথি নিয়ে সহজে পাল্টানো হত ডলার। আবার বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও তাঁদের কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলার ঘুরপথে বেশি দামে কিনে নেয় ফোরেক্স সংস্থার এজেন্টরা। তাদের কাছ থেকে সেই ডলার সংগ্রহ করতেন শংকর আঢ্যর এজেন্টরা। শংকর আঢ্য গ্রেপ্তার ও তাঁর এবং আত্মীয়ের অফিস সিল করার পর বাংলাদেশ থেকে সোনা পাচারও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.