দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিজিটাল রেশন কার্ড ছাড়াই রেশন পাবে রাজ্যবাসী। কিন্তু গ্রাম বাংলার চিত্র অন্য কথা বলছে। ডিজিটাল রেশন কার্ড ছাড়া মিলছে না কোনও রেশন সামগ্রী। ফলে সমস্যায় পড়েছে হাজার হাজার গরীব মানুষ। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনও তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে কবে থেকে তারা রেশন পাবেন তাও বুঝতে পারছেন না। আর তাই লকডাউনের সময় চরম অনটনের মুখে পড়েছেন সেই সমস্ত গরীব পরিবারগুলি।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, জয়নগর, কুলতলি, বারুইপুর, ভাঙড়, কুলপি, ডায়মন্ডহারবার, বিষ্ণুপুর সর্বত্র প্রায় রেশন নিয়ে অভিযোগ আছে স্থানীয় মানুষজনের। রেশন সামগ্রী না পেয়ে কোথাও কোথাও রেশন দোকানে ভাঙচুর ও তালা ঝোলানোর ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ডিজিটাল রেশন কার্ড ছাড়া রেশন পাওয়ার জন্য। যাদের কেউ এপিএল আবার কেউ বা বিপিএল রেশন কার্ড হোল্ডার। কিন্তু যেহেতু তাদের ডিজিটাল কার্ড নেই তাই তারা রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সেই ক্ষেত্রে আশ্বাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেন না প্রশাসনের আধিকারিকরা।
ক্যানিং ১ নম্বর ব্লকের বাশড়া এলাকায় বাড়ি শান্তনু নস্কর বলেন, “আমরা যখন বিডিও অফিসে যাচ্ছি, তখন বিডিও অফিস থেকে বলা হচ্ছে আপনার এলাকায় গিয়ে প্রধানের সাথে কথা বলুন। প্রধানের কাছ থেকে কুপন নিয়ে আসলে তবে আপনারা ডিলারের থেকে রেশন সামগ্রী পাবেন। আর যতদিন না নতুন করে ডিজিটাল কার্ড পাচ্ছেন ততদিন এইভাবে আপনার রেশন পাবেন। কিন্তু এলাকায় গেলে প্রধান বলছে, আমাদের কাছে কোনও খাদ্য তোলার কুপন নেই। বিডিও অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করুন। ফলে এই লকডাউনের সময় বিডিও অফিস এবং প্রধানের অফিস এই করতে করতে সময় চলে যাচ্ছে। রেশন পাওয়া যাচ্ছে না তারা।” রেশন সামগ্রী না পাওয়া রামপ্রসাদ সরদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আমি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু যখন থেকে রেশন কার্ড ডিজিটাল হয়েছে তখন থেকে আমি কোনও রেশন সামগ্রী পাচ্ছি না। সরকারের উচিত আমাদের জন্য রেশন সামগ্রীর ব্যবস্থা করা।” অন্যদিকে, আশুতোষ মণ্ডল নামে এক বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি প্রায় চার বছর যাবৎ রেশন পাচ্ছেন না। লকডাউন এর আগেই বহুবার তিনি বিডিও অফিস থেকে ফুড অফিস গিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। শুধু ডিজিটাল কার্ডের সমস্যা হচ্ছে ব্যাপারটা এমন নয়। সমস্যা দেখা দিয়েছে ঠিকানা পরিবর্তন করার কার্ড গুলিতেও।বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রেশন ডিলারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, ডিজিটাল কার্ড ছাড়া তাদের পক্ষে কোনভাবেই রেশন সামগ্রী দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, বিভিন্ন সমস্যা আছে এই সমস্ত কার্ড নিয়ে। এক ব্যক্তি দু-তিনবার করে দরখাস্ত করেছেন ডিজিটাল কার্ডের জন্য। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নম্বর দেওয়া হয়েছে, ফলে অসুবিধা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ঠিকানা ও ভুল আছে।তবে চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত বিষয়টি মিটিয়ে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.