অভিরূপ দাস: নিজের নকল দাঁতের পাটি গলায় আটকানোর ঘটনা কম নয়। প্লাস্টিকের বাঁশি, লোহার পিন, ধাতব মুদ্রা ইত্যাদিও হামেশা মুখের মধ্যে ঢুকে বিপত্তি ঘটায়। কিন্তু ইঁদুরের দাঁত! তাও আবার একরত্তির ফুসফুসে! পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত দুরস্থান, গোটা বিশ্বে এমনটি হয়েছে কি না, ডাক্তারবাবুদের জানা নেই। এমনই বিরল কাণ্ডের সাক্ষী রইল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের (Bardhaman Medical College and Hospital) ইএনটি (ENT) বিভাগ।
দশমাসের তন্মিকা টুডুর ফুসফুস থেকে যেটা বেরোল সেটা দেখে প্রথমে হকচকিয়ে যান চিকিৎসকরা। ভাল করে দেখে বুঝতে পারেন ছোট্ট সুচাল জিনিসটা ইঁদুরের দাঁত। কিন্তু তা ফুসফুসে ঢুকল কী ভাবে?
বীরভূমের (Birbhum) রামপুরহাটের বাসিন্দা ওই খুদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির উঠোনে নোংরা জিনিস ঘাঁটাঘাঁটি করছিল শিশুটি। নাতনিকে নোংরা মাখামাখি করতে দেখে দৌড়ে আসেন ঠাকুমা। ততক্ষণে একমুঠো নোংরা মুখে পুরে দিয়েছে খুদে। তার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ইঁদুরের দাঁত। কাঁদতে শুরু করে সে। কান্নার আওয়াজ শ্বাসনালি বা ল্যারিংসের ভয়েস বক্স থেকে আসে। ভয়েস বক্সের টানেই ইঁদুরের দাঁত সটান ঢুকে যায় ফুসফুসে। বাড়ির লোকেরা তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। রাত্রিবেলা থেকে শুরু হয় সমস্যা।
শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওঠানামা করতে থাকে বুক। প্রাথমিকভাবে ভরতি করা হয় রামপুরহাট হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলেন নিউমোনিয়া। কিন্তু দেখা যায় সমস্যা অন্যত্র। চিকিৎসকরা আন্দাজ করেন কোনও বিজাতীয় বস্তু ব্রঙ্কাসে চলে গিয়েছে। রেফার করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাশ্বত সরকার জানিয়েছেন, বাচ্চাটিকে প্রথম যখন দেখি শ্বাসকষ্টে নীল হয়ে গিয়েছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন তলানিতে। দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়। অ্যানাস্থেশিয়া করতে গিয়ে আরও বিপত্তি। দেখা যায় স্যাচুরেশন ক্রমশ শূন্যের কাছে চলে যাচ্ছে।
প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে সফল হয় অস্ত্রোপচার। শ্বাসনালির মধ্যে টেলিস্কোপিক ব্রঙ্কোস্কোপির মাধ্যমে বের করা হয় দুধসাদা দাঁতের টুকরো। ডা. স্বপনকুমার ঘোষের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন ডা. ঋতম রায়, ডা. শাশ্বত সরকার, ডা. সৃজিত সুর। শিশুটি এই মুহূর্তে ভেন্টিলেশনে রয়েছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। চিকিৎসকদের কথায়, ইঁদুরের দাঁত অত্যন্ত ধারালো, যে কোনও মুহূর্তে তা দশ মাসের শিশুর শ্বাসনালি ছিঁড়ে দিতে পারত। জেলা হাসপাতালে এমন অভাবনীয় অস্ত্রোপচার প্রমাণ দিচ্ছে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের তুলনায় এগিয়ে অনেকটাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.