Advertisement
Advertisement
Lord Buddha

জৈন ভূমিতে বিরল বৌদ্ধ স্থাপত্য! বুদ্ধের নির্বাণলাভের মূর্তি উদ্ধার, শুরু গবেষণা

পুঞ্চায় উদ্ধার হওয়া মূর্তি যাচ্ছে রাজ্যের সংগ্রহালয়ে।

Rare Statue of Lord Buddha recovered from Puncha, Purulia, known as Jain dominated area | Sangbad Pratidin

ছবি: সুনীতা সিং।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 1, 2023 5:16 pm
  • Updated:August 1, 2023 5:50 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জঙ্গলমহলের ‘মুক্ত জাদুঘর’ বলে পরিচিত জৈন ক্ষেত্র পুরুলিয়ার (Purulia) পাকবিড়রা। আর তার অদূরে মিলল বিরল বৌদ্ধমূর্তি (Buddha Sculpture)। তথাগত বুদ্ধর (Lord Buddha) ‘মহাপরিনির্বাণ’-এর মূর্তি। সোমবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের ধাদকি মোড়ের কাছে একটি কালভার্টের পাশে চায়ের দোকানের সামান্য দূরে ফাঁকা মাঠ থেকে নির্বাণরত বুদ্ধদেবের মূর্তি উদ্ধার হয়। যা রীতিমতো বিরল ও বিস্ময়ের! এই জায়গা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক প্রত্নস্থল জৈন ক্ষেত্রের পটভূমি পাকবিড়রা। তাহলে কি জৈন ভূমিতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল সেই সময়? এই মূর্তি উদ্ধারকে ঘিরে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে জৈন ক্ষেত্র পুরুলিয়ায়।

তবে পুরুলিয়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, এই মূর্তি তথাগত বুদ্ধের নির্বাণলাভের। কষ্টিপাথরের এই বুদ্ধমূর্তিটিতে মস্তকের অংশটিই রয়েছে। মূর্তিটি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর ‘সারনাথ’ মূর্তি। বুদ্ধদেবের ‘নির্বাণলাভ’ অর্থাৎ দেহত্যাগের পর সম্ভবত এই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। এই মূর্তি যাচ্ছে রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের আওতায় থাকা রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব অধিকারের কলকাতার বেহালায় রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে। সেখানে তারা কার্বন ডেটিং (Carbon Dating) টেস্ট করে এর সময়কাল জেনে মূর্তি এঁকে ব্যাখ্যা করে সমস্ত রকম বিবরণ তুলে ধরবেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা করেননি? জেনে নিন কী করবেন]

জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, “দেড় থেকে দু’কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের যে বুদ্ধ মূর্তির মস্তকের অংশ পাওয়া গিয়েছে, তা পঞ্চম শতকের। এই মূর্তি বুদ্ধদেবের ‘মহাপরিনির্বাণ লাভ’-এর। ভারতীয় জাদুঘরে এমন মূর্তি রয়েছে। এই মূর্তিকে ‘সারনাথ’ মূর্তি বলা হয়। এই ধরনের মূর্তি সর্বপ্রথম উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) সারনাথে পাওয়া যায়। প্রায় ৬০০ বছর আগের মূর্তি জৈন ভূমি পুরুলিয়ার বুকে পাওয়ায় বিস্ময় আরও বাড়ছে। এটি গবেষণারও বিষয়।” সোমবার বিকালে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক নিজে উদ্ধারস্থলে গিয়ে পুঞ্চা ব্লক ও পুলিশ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ওই মূর্তি নিয়ে আসেন।

ছবি: সুনীতা সিং।

উদ্ধার হওয়া ওই মূর্তি দেখে প্রশাসনের তরফে বৌদ্ধ মূর্তি বলে দাবি করা হলেও পুরাতত্ত্ব গবেষক তথা ‘জৈন সংস্কৃতি সংরক্ষক’ উপাধি পাওয়া সুভাষ রায় বলছেন, “এটি সম্পূর্ণভাবে কোনও জৈন (Jain) প্রত্নমূর্তি বা তীর্থঙ্কর মূর্তির মস্তক অংশ। কারণ ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক জে. ডি. বেগলারের রিপোর্টে এই ধাদকিটাড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৭২ সালে তিনি যখন সাবেক মানভূম পরিভ্রমণ করেন, সেই সময় এই এলাকায় ১২০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে জৈন প্রত্নস্থল দেখতে পেয়েছিলেন। সেই প্রত্নস্থল থেকে পরবর্তীকালে শিব মন্দিরে যে দুটি মূর্তি পাওয়া যায় তার একটি তীর্থঙ্কর মহাবীরের এবং আরেকটি শান্তিনাথ ভগবানের। এগুলি সম্পূর্ণভাবে জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা বলতে পারি, এটিও তীর্থঙ্কর মূর্তির একটি ভগ্নাংশ।”

ছবি: সুনীতা সিং।

তাঁর দাবি, তিনিও এই এলাকা ভ্রমণ করে দেখেছেন, ১০-১২টি প্রত্নস্থল জৈন প্রত্নক্ষেত্র। তাঁর কথায়, “সবথেকে বড় কথা হল পাকবিড়রার মূর্তির সঙ্গে এই মূর্তিটির হুবহু মিল রয়েছে। তাছাড়া এই জেলার রঘুনাথপুর দু’নম্বর ব্লকের তেলকূপিতে প্রাপ্ত মূর্তির ভগ্নাংশের সঙ্গে এই মূর্তির মিল পাওয়া যায়। এই মূর্তিটি গ্রানাইটের।”

[আরও পড়ুন: স্কুলের ল্যাবরেটরিতে বিস্ফোরণ, হাসপাতালে শিক্ষক-সহ ১০ ছাত্রী]

লোকসংস্কৃতি গবেষকরা বলছেন, কাঁসাই নদী ছুঁয়ে পুঞ্চার পাকবিড়রায় জৈন সংস্কৃতির একটি ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। এখান থেকে একের পর এক জৈন স্থাপত্য উদ্ধারের পর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে এটি জৈন ক্ষেত্র ছিল। এই এলাকাকে সংরক্ষণ করে আগেই ‘হেরিটেজ ট্যুরিজম’-র তকমা দিয়েছে রাজ্য পর্যটন বিভাগ। ওই বিভাগ এবার এই এলাকার আরও বৃহৎ আকারে পুরাকীর্তির পুন:প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার করবে। তার ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট (DPR) তৈরির কাজ চলছে। লোকসংস্কৃতি গবেষকদের কথায়, পুঞ্চার পাকবিড়রা, বারমাস্যা, বুদপুর, লাখরা। এটা জৈনদের ‘ট্রেড রুট’ ছিল। এই রুট-সহ তাম্রলিপ্তের সঙ্গে বেনারসের একটা যোগসূত্র পাওয়া যায় ইতিহাসে। এই বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে তাম্র ব্যবসা চলত সম্ভবত নবম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত।

Buddha Statue
এই মূর্তি কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের, সদ্যপ্রাপ্ত মূর্তির সঙ্গে মিল। ছবি: সুনীতা সিং।

পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, “একথা বলতেই পারি ধাদকি এলাকা থেকে প্রাপ্ত মূর্তিটি জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তির মস্তক অংশ। যে মূর্তি উদ্ধার হয়েছে এরকম হুবহু সব ছবি আমার কাছে রয়েছে। তবে এই মূর্তির প্রকৃত সংরক্ষণ হোক।”

দেখুন ভিডিও:

 

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement