Advertisement
Advertisement

Breaking News

পরপর ৮ চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি, প্রতিজ্ঞা পূরণ করে দাড়ি কামাতে রাজি বনকর্তা

খুবলে খাওয়া ১২ বছরের কিশোরের মৃতদেহ বদলে দেয় জীবন।

Range Officer successfully caged leopards
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:February 10, 2019 6:04 pm
  • Updated:February 10, 2019 6:04 pm  

রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: এক সময় প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই গালের দাড়ি কামিয়ে নিতেন। যতই কাজ থাকুক এই রুটিনের কোন পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন করে দিল চিতাবাঘের হামলার ঘটনা। চাকরিতে দায়িত্ব নেওয়ার দিনই চিতাবাঘের হামলার ঘটনা ঘটে। আর সেই দিন থেকে বছর সাতাশের বনদপ্তরের আধিকারিক পণ করেছিলেন, যতদিন এই হামলাকারী চিতাবাঘকে ধরতে না পারছেন ততদিন তিনি গালের দাড়ি কামাবেন না। আর সেই কারণেই ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে আজও দাড়ি কাটেননি জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের লঙ্কাপাড়া রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার বিশ্বজিৎ বিশোই।

পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ছেলে কানাড়া ব্যাংকের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে বনদপ্তরের চাকরিতে যোগদান করেন। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানেই তার প্রথম জয়েনিং। কিন্তু ২৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ যেদিন তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন সেদিনই রামঝোরা চা-বাগানের ফ্যাক্টরি লাইন থেকে ১২ বছরের অনিকেত ওরাওকে টেনে নিয়ে যায় চিতাবাঘ। জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া চা-বাগানে এমন ঘটনা ঘটবে তা আগে কোনওদিন ভাবতেই পারেননি রেঞ্জ অফিসার বিশ্বজিৎ। গলায় খুবলে খাওয়া ১২ বছরের কিশোরের মৃতদেহ দেখে চোখের জল এসে গিয়েছিল কখন তা নিজেও বুঝতে পারেননি। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এই চিতাবাঘ যতদিন না পাকড়াও করছেন ততদিন “ নো শেভ” অবস্থাতেই থাকবেন তিনি। হয়েছেও তাই। এখনও এক গাল দাড়ি নিয়েই রাত দিন এক করে পরিশ্রম করছেন তিনি। তবে সাফল্য পেয়েছেন। পরপর মোট ৮টি চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হয়েছে। রামঝোরা চা-বাগান থেকেই ধরা পড়েছে দুটো চিতাবাঘ। এখন কি দাড়ি কাটবেন? বিশ্বজিৎ বিশোই বলেন, “এখন কাটতেই পারি। কারণ আমি আমার প্রতিজ্ঞা সম্পূর্ণ করেছি। সেই চিতাবাঘকে খাচাবন্দি করা গিয়েছে। এখন জঙ্গল লাগোয়া চা-বাগান এলাকাতে চিতাবাঘের উপদ্রব অনেক কমে গিয়েছে। হ্যাঁ, আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেই চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি না হওয়া পর্যন্ত শেভ করব না। আমি ও আমাদের বনদপ্তরের কর্মীরা রাত দিন এক করে পরিশ্রম করেছি। আর তার ফলেই সেই চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হয়েছে।”

Advertisement

[লোকালয়ে বাঘ ঢুকলেই এবার সতর্ক করবে সাইরেন]

বিশ্বজিৎ বিশোইয়ের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে। পড়াশোনা করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জলচক নাটেশ্বরী নেতাজি বিদ্যায়তনে। তার পর হলদিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। আর তার পরেই লোভনীয় ব্যাংকের চাকুরি। কিন্তু নিজে জঙ্গলমহলের ছেলে। তাই জঙ্গল সবসময় টানতো তাঁকে। আর সেই কারণেই ব্যাংকের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন রাজ্য বনদপ্তরে। যে যাই বলুন তার জেদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। মন্ত্রী বলেন, “ এই জেদ আজকাল অনেকের মধ্যেই হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই জেদ, এই স্পিরিট না থাকলে কোনও দিন কোনও বড় কাজ করা যায় না। আমি এই আধিকারিককে ধন্যবাদ জানাই। এই আধিকারিকের এই জেদ আজ আমাকেও আমার নিজের জীবনের কথা মনে করিয়ে দিল। আমরাও রাজ্য থেকে সিপিএম সরকারকে সরানোর জন্য মনে এমন জেদ করেছিলাম। এই অফিসার অনেকের জীবনের অন্যতম আদর্শ হতে পারে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement