সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভিড়ের মাঝে একমনে সুরসাধনাই ফিরিয়ে দিল অনেক কিছু৷ এতদিনের ক্ষয়ে যাওয়া সম্পর্কও নিমেষে তরতাজা হয়ে উঠল৷ দীর্ঘদিন পর রানাঘাট স্টেশনেই প্রায় বসতি গড়ে তোলা মায়ের সঙ্গে দেখা করে গেলেন তাঁর মেয়ে৷ এতদিনে মা রানুর সঙ্গে মিলন হল মেয়ে সাথীর৷
স্টেশনের ভিড়ের মাঝে রানু নামের ওই বৃদ্ধা নিজে একমনে গেয়ে যেতেন একটিই গান – ‘এক প্যার কা নাগমা হ্যায়’৷ যেমন নিখুঁত সুর-তাল, তেমনই দরদ৷ শুনে চমকে উঠতেন যাত্রীরা৷ মনে হত যেন পাশে বসে স্বয়ং লতাজিই গাইছেন সেই গান৷ নিজের সঙ্গীতসাধনায় তিনি এতটাই বুঁদ হয়ে থাকতেন যেন মনে হত, বাকি জগৎটা তাঁর কাছে অস্তিত্বহীন৷ জনৈক যাত্রীর মোবাইল রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে এঁর গানের কথা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ অনেকেই মুগ্ধ হন তাঁর গানে৷ তাঁর জীবনটাই একটা নতুন দিকে বাঁক নিয়েছে৷
রানুর গান শুনে ফোন আসছে সুদূর দিল্লি-মুম্বই থেকেও। ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের এক টেলিভিশন চ্যানেলের তরফে ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে লতাকণ্ঠী রানুকে। দিল্লির একটি সমাজসেবী সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করেছে তাঁর সঙ্গে। কিন্তু যাঁর দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় হয় না, তাঁর সঙ্গে কীভাবে দূরভাষে যোগাযোগ করা সম্ভব? ঠিক এখানেই এগিয়ে এসেছেন এক সহৃদয় ব্যক্তি। তিনি রানুর প্রতিবেশী তপন দাস। যিনি প্রথম রানুর গান রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন৷ বাইরের রাজ্যগুলি থেকে তাঁর মোবাইলেই ফোন আসছে। রানাঘাটের এই ‘সুরসম্রাজ্ঞী’র গান শুনে মুগ্ধ তাঁরা। তাই তাঁদের কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন রানু ওরফে রানু মারিয়া মণ্ডলের কণ্ঠ।
এসব দেখে মেয়ে সাথী ছুটে এসেছে মায়ের কাছে৷ বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা সাথী এতদিন নিজের জীবন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন৷ সংসার, দোকান এসব সামলাতেই দিন কেটে যেত তাঁর৷ এসবের মাঝে তাঁকে একাই বিবাহবিচ্ছেদের মতো একটি কঠিন পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে৷ সবমিলিয়ে, মাকে একটু চোখের দেখা দেখতেও আসতে পারেননি সাথী৷ কিন্তু ‘প্যার কা নাগমা’ ঘুচিয়ে দিল সমস্ত প্রতিবন্ধকতা৷
মায়ের গানের কথা শুনে ছেলেকে নিয়ে সাথী এসেছেন রানাঘাটে৷ এতদিনে মা-মেয়ের মিলন হল৷ মেয়েকে দেখে কাঁপা গলায় রানুদেবীর প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘তুই কেমন আছিস? বাড়ির সবাই কেমন আছে?’ উচ্ছ্বসিত সাথী জানিয়েছেন, ‘আট-দশ বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা হল৷ শুনলাম, মায়ের গানের ভিডিও খুব জনপ্রিয় হয়েছে, সবাই খুব প্রশংসা করছেন৷ খুব ভাল লাগছে৷ মা তো তেমনভাবে কখনও গান গাওয়ার সুযোগ পাননি৷’ মা-মেয়ের মিলনদৃশ্যের পাশাপাশি রবিবার প্রতিবেশীরা আরও এক স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন৷ রানুদেবী এবং সাথী একসঙ্গে গান গেয়েছেন৷ সে গান হয়ত ‘প্যার কা নাগমা’ নয়, কিন্তু শেষ কথা একটিই – ‘জিন্দেগি অওর কুছ ভি নহি/ তেরি-মেরি কাহানি হ্যায়…’৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.