নন্দন দত্ত, সিউড়ি: নিদান দিয়েছে গুনিন। তার নিদানে প্রতিবেশি সিদ্ধার্থের বউ ডাইনি। তারপর থেকেই ডাইনি অপবাদে সিদ্ধার্থের পরিবারকে ঘড়ছাড়া করে দিয়েছে রামপুরহাটের শোঁয়াসা গ্রামের লোকেরা। আতঙ্কে তাঁরা মামিশাশুড়ির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এবার তাঁকেও ডাইনির গুরু আখ্যা দিয়ে হুমকি পর্ব চলছে। এমনকি আগুন দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা চলছে। রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের কাষ্ঠগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শোঁয়াসা গ্রামের পূর্বপাড়ায় বসবাস করেন সিদ্ধার্থ ও তাঁর স্ত্রী নয়নমণি লেটের। প্রতিবেশী যুবক সঞ্জয় লেটের গত চার বছর ধরে রোগ সারছিল না। ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করায় ঘর ছেড়ে মামিশাশুড়ির বাড়িতে আশ্রয় নেয় সিদ্ধার্থের পরিবার। গৃহবধূর মামিশাশুড়ি দুর্গাদাসী লেট ডাইনিকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁকেও ডাইনি গুরু অপবাদে হুমকি দেওয়ায় শুরু হয়েছে।
সিদ্ধার্থ বলেন, “দিন কয়েক আগে সঞ্জয়রা গুনিনের কাছে যায়। গুনিন তাদের জানিয়ে দেয়, আমার স্ত্রী নয়নমণি লেট ডাইনি। আর আমার মামি দুর্গাদাসী তার গুরু। এরপর ভরের মধ্যে সঞ্জয় বলে তার শরীরে ‘নয়নি’ (নয়নমণি লেট) ঢুকেছে। পরদিন সকালে উঠে সঞ্জয় ও তার বাড়ির লোকজন আমার স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে মারে। আমার মামিকেও মারতে যায়। ভয়ে আমরা ঘর ছেড়ে মামির ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। রামপুরহাট থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে”। নয়নমণি লেট বলেন, “দিন কয়েক আগে আমার অপারেশন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে চুলের মুঠি ধরে ওরা আমাকে মেরেছে। হুমকি দিচ্ছে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে দেবে। ভয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছি”।
[ন’মাস পর নিখোঁজ ছেলেকে ঘরে ফেরাল ফেসবুক]
যদিও এদিন সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী মিনু লেটের দাবি, নয়নমণি লেট ডাইনি। সেই তাঁর স্বামীর শরীরে ঢুকে রোগ ভাল হতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, “চার বছর ধরে স্বামী অসুস্থ। বহু ডাক্তার দেখিয়ে, ওষুধ খেয়েও কোন লাভ হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে গুনিনের কাছে গিয়েছিলাম। তিনিই জানিয়ে দেন নয়নমণি ডাইনি। তাছাড়া স্বামীর যখন ভর ওঠে তখন বার বার নয়নির নাম করেছে।’ বিজ্ঞান মঞ্চের বীরভূম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাদ্রিশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডাইনি, ভূত, প্রেত বলে কিছু হয় না। একশ্রেণির মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে কাউকে কাউকে ডাইনি অপবাদ লাগিয়ে গ্রাম ছাড়া করে, কিংবা পিটিয়ে মারে। আক্রোশ মেটাতে গ্রামবাসীদের লেলিয়ে দেয়”।
[‘মা’ সম্বোধন করে ‘ধর্ষণ’, মরণাপন্ন ৭০ বছরের বৃদ্ধা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.