নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বগটুই (Bogtui) গ্রামে রাতের অন্ধকারে অগ্নিসংযোগ ও পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের নিয়ে বিস্ফোরক দাবি স্বজনহারার মিহিলাল শেখের। মঙ্গলবার তিনি প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন। ক্ষোভের সুরে তাঁর অভিযোগ, ধৃতরা জেলের ভিতর রাজার হালে আছে। স্থানীয় বিধায়কের (MLA)মদতে জেলের ভিতর তাদের সব সুবিধা পৌঁছচ্ছে। উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনে উলটে তাদের পরিবারের লোকেদের জেলের ভিতর সেলের কুঠুরিতে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন মিহিলাল শেখ। নাম না করেও তিনি যাঁর দিকে ইঙ্গিত করতে চাইছেন, রামপুরহাটের বিধায়ক তথা উপাধ্যক্ষ সেই আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Asish Banerjee)পালটা দাবি, ”মিহিলাল কারও শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন। পরিকল্পিতভাবে তিনি দলকে ও আমাকে হেয় করতে চাইছেন।”
গত ২১ মার্চ রামপুরহাটের (Rampurhat) বগটুই মোড়ে খুন হন উপপ্রধান ভাদু শেখ। সেই রাতেই গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মিহিলালদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন মিলিয়ে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয় অগ্নিদগ্ধ। একমাস পরে মিহিলাল শেখ স্থানীয় প্রশাসন ও তৃণমূল (TMC)নেতাদের একাংশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিহিলালের দাবি, এই সময় তাঁদের রমজান মাসের উপবাস চলছে। সেজন্য বিডিওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁরা ত্রাণ দাবি করেছিলেন। প্রশাসন চারটি থলিতে কিছু চাল, সামান্য মসুরডাল, একটি লুঙ্গি ও এক প্যাকেট বিস্কুট পাঠিয়েছে। সঙ্গে সাদা থানের শাড়ি। রোজার মাসে কীভাবে তাঁদের সংসার চলবে, তা একবারও ভাবেনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এসে তাঁদের যথেষ্ট পরিমান ত্রাণসাহায্যের কথা দিয়েছিলেন।
মিহিলাল জানান, তাঁদের কী কী প্রয়োজন তা তিনি সামান্য একটি তালিকা করে প্রশাসনকে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তা দেয়নি। রামপুরহাট মহকুমা শাসক সাদ্দাম নাভাস জানান, গত সপ্তাহে তাঁদের চাহিদামত ত্রাণ পাঠান হয়েছিল। চলতি সপ্তাহের বিষয়টি তিনি দেখে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, জেলবন্দি আছেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেন-সহ ২৫ জন। তাঁদের জেলের ভিতর নেশার সামগ্রী-সহ সব কিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জেল সুপাররা এই সুবিধা দিচ্ছেন। তারা বিষয়টি সিবিআইকে (CBI) জানাবেন।
মিহিলাল শেখের দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল। কিন্তু এলাকার ফোর পাশ বা তার থেকে কম পড়াশোনার লোক প্রধান, অঞ্চল সভাপতি পদে বসে আছেন। দলের মাথায় উচ্চশিক্ষিত লোক না বসালে তৃণমূল আরও রসাতলে যাবে। সব হচ্ছে আশিসবাবু ও তার ভাইপো সমুর নেতৃত্বে। তারা আমাদের উপর দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার চালাচ্ছে। বিধায়ক একবার আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে খবর নেননি।’’ যদিও আশিসবাবু জানান, ‘‘মিহিলাল কারও শেখানো বুলি পরিকল্পিতভাবে আউরে যাচ্ছেন। তাতে দলের লোকের কিছু ইন্ধন আছে। বিষয়টি দলকে জানাব।’’ তিনি দাবি করেন, গত একবছর রামপুরহাট জেল বা জেল সুপারের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ হয়নি। তাঁকে হেনস্থা করতেই মিহিলালকে অস্ত্র হিসাবে কেউ সামনে আনতে চাইছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.