সুমন করাতি, হুগলি: আগামী সপ্তাহে অযোধ্যায় ধুমধাম করে উদ্বোধন হচ্ছে রামমন্দির (Ram Temple)। কিন্তু এরাজ্যে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে (Sreerampur)প্রাচীন রাম-সীতার মন্দির অবেহেলায় পড়ে, কিন্তু সেদিকে নজর নেই কারও। অযোধ্যার প্রসঙ্গ তুলে বৈষম্যের অভিযোগ বাসিন্দাদের। এখন শেষ ভরসা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। এমনই মনে করছেন জেলাবাসী।
বহু ইতিহাসবিদ মনে করেন শ্রী রামচন্দ্রের নাম থেকেই হুগলি জেলার শ্রীরামপুর নামকরণ। তার নিদর্শনটি এখনও এই শহরেই বিদ্যমান। সেটি হল রাম-সীতার একটি মন্দির। শেওড়াফুলি রাজা মনোহরচন্দ্র রায়ের পুত্র রাজচন্দ্র ১৭৫৩ সালে তৈরি করেছিলেন এই মন্দিরটি। পাঁচ কাঠা জমির উপর তখন গড়ে উঠেছিল গোলপাতার এই মন্দির। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাম-সীতার মূর্তি। এর পর মন্দিরটি এক চালার হয়। তখন শ্রীপুর, গোপীনাথপুর ও মোহনপুর এই তিন গ্রামকে সংযুক্ত করে এর নামকরণ হয়েছিল শ্রীরামপুর। মন্দির এখন কালের নিয়মে ভগ্নপ্রায় অবস্থা। রাজ পরিবার যে ব্রাহ্মণকে পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত করেছিল সেই পুরোহিত বংশ এখনো মন্দির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। তবে অর্থের অভাবে মন্দিরটির এখন দশা বেহাল। শ্রীরামপুরের অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ, শত শত কোটি টাকা খরচ করে অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হচ্ছে। আর এই শহরে থাকা প্রাচীন রাম-সীতার দেবস্থানের সংস্কার হচ্ছে না টাকার অভাবে। একই দেবতা দুই জায়গায় দুই রকম খাতির পাচ্ছেন এরকম বৈষম্য উচিত নয়।
শ্রীরামপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে এই প্রাচীন রাম-সীতার মন্দিরটি। সাত পুরুষ আগে রাজা রাজচন্দ্র রামের পুরোহিতদের দায়িত্ব সঁপেছিলেন যে পুরোহিত পরিবারের হাতে সেই বংশের এক সদস্য চন্দ্রশেখর রায় এখন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায় নিত্যপুজো হয় এই মন্দিরে ভক্তদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতায়। মন্দির লাগোয়া বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তবে মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ সাহায্য মেলেনি।
রাজ পরিবারের সদস্য পরম কল্যাণ রায় বলেন, ”জমির মালিকানা দলিল-সহ সমস্ত নথি আমাদের কাছে আছে। আমরা চাই সরকার হস্তক্ষেপ করুক। মন্দির পুনর্নির্মিত হোক। এই জায়গাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিক সরকার।” রাজ পরিবারের আরেক সদস্য সুমিত ঘোষ বলেন, ”আমরা চাইছি, মন্দির সংস্কার হোক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজ্য জুড়ে অবহেলিত দর্শনীয় স্থানগুলি নবরূপে সেজে উঠছে। আমরা চাই, সরকারেই ঐতিহাসিক রাম-সীতার মন্দিরও অধিগ্রহণ করুক।”
শ্রীরামপুরের অধিকাংশ বাসিন্দার বক্তব্য, ”কলকাতায় বিজেপির আয়োজিত অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ মানুষ গীতা পাঠ করলেন। এই ধর্মপ্রাণ মানুষগুলি যদি মাত্র ১০ টাকা করে অনুদান দিতেন, তাহলেই শ্রীরামপুরের রামচন্দ্র আর সীতা মাকে অবহেলায় এভাবে পড়ে থাকতে হতো না।” এই বিষয়ে শ্রীরামপুর পুরসভার পুরপারিষদ সন্তোষ কুমার সিং বলেন, ”ইতিমধ্যেই বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে আমরা ওই মন্দির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি আর খুব শীঘ্রই ওই মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আমরা বিজেপির মত ভগবানকে সামনে রেখে রাজনীতি করি না। রাম সকলের ভগবান আর বিজেপি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের নামে লোকসভা ভোটের প্রচার করছে। কিন্তু আমাদের কাছে সকল ভগবানের স্থান আমাদের হৃদয়ে। আর খুব শীঘ্রই এখানের প্রাচীন রাম-সীতার মন্দিরের সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.