সুব্রত বিশ্বাস: কাঁকিনাড়া স্টেশনে পুলিশ প্রহরায় থাকলে খুন হতে হত না বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে। একথা যাত্রীদের নয়, খোদ রেল পুলিশেরই। রাত প্রহরায় কেন ছিল না পুলিশ? ওই স্টেশনেই তিন জিআরপির পিকেটিং ডিউটি ছিল। তাঁরা ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন? এই প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠলেও রেল পুলিশ কর্তাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরই কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। পিকেটিংয়ে ছিলেন ইনচার্জ শরিফুল মাহালদার (এএসআই), কনস্টেবল শুভঙ্কর দে ও অরূপ ভট্টাচার্য। রাতের শেষ লোকাল চলে যাওয়ার পর তিনজনই কাঁকিনাড়া জিআরপির ওসির বারাকে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতের নিরাপত্তা যাঁদের হাতে তাঁরা কি না রাতঘুমে? শনিবার ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে গিয়ে এই বিষয়টা জেনে এতটাই ক্ষুব্ধ হন রেল পুলিশ কর্তারা যে কাঁকিনাড়া জিআরপির ওসি দেবব্রত ভৌমিক-সহ পিকেটিংয়ের তিন পুলিশকেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
স্টেশনে কর্তব্যরত তিনজন পুলিশ কর্মী উপস্থিত থাকলে এমন ঘটনাই ঘটত না বলে রেল পুলিশের কর্তারা মনে করেন। কারণ হিসাবে তাঁরা স্পষ্ট করেছেন, আক্রমণকারী দুষ্কৃতীদের ‘টার্গেট’ ছিল না বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও তাঁর সঙ্গী। ওই এলাকায় রাতেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা ও বোমাবাজি হয়। অন্য গোষ্ঠীর লোকজন যাতে এলাকায় না ঢুকতে পারে সেজন্য এক গোষ্ঠীর হয়ে এলাকায় প্রহরার কাজ করছিল তিনজন। এরাই গভীর রাতে বিশ্বজিৎ ও তাঁর সঙ্গীকে দেখে ফন্দি আঁটে ছিনতাইয়ের। প্ল্যাটফর্মে পুলিশ না থাকায় সেখানেই দু’জনকে ধরে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ওই তিনজন। সে সময় মহম্মদ ইমরান ওরফে পিন্টুকে ধরে ফেলেন বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। ইমরানের হাতে বোমা ছিল। ধস্তাধস্তিতে দু’জনই প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইনে পড়ে যায়। সে সময়ই ইমরানের হাতের বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। তাতেই মৃত্যু ঘটে বিশ্বজিতের। হাতের একাংশ উড়ে যায় ইমরানের।
পরে রক্তের দাগ দেখে পুলিশ ইমরানকে ধরে। হাসপাতালে পাঠায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও দু’জনের কথাও জানতে পেরেছে রেল পুলিশ। দোষীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। তারা প্রত্যেকে দু-নম্বর গলির বাসিন্দা। বয়স ২০ থেকে ২২-এর মধ্যে। ফলে খুব শিগগির তাদের ধরা সম্ভব হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাতের কাটা অংশটি চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে তা দুষ্কৃতী ইমরানের কি না। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি যাত্রীদের অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস ধরে কাঁকিনাড়া স্টেশনে রাত সাড়ে সাতটার পর সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। দোকান ও হকারদের জ্বালানো আলোই ভরসা। ফলে দুষ্কৃতী তাণ্ডবও চলছে সমান তালে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.