বাবুল হক, মালদহ: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে দুর্ঘটনার মুখ থেকে বাঁচানোর পুরস্কার মাত্র ১৫০০ টাকা! দাবি উঠেছিল পরিবারের একজনকে অন্তত একটা চাকরি দিক রেল। ছেলেটির পড়াশোনার দায়িত্ব নিক। রেলের তরফে পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা করা হোক। এমন সব দাবি তুলে কার্যত ঝড় তোলা হয়েছিল সোশাল মিডিয়ায়। কিন্তু নিটফল আপাতত মাত্র ১৫০০ টাকা! ট্রেনের যাত্রীদের বাঁচিয়ে ‘হিরো’ বনে যাওয়া মোরসেলিমের হাতে পুরস্কার হিসেবে এই সামান্য অর্থই তুলে দিয়েছে রেল প্রশাসন। সেই সঙ্গে একটি শংসাপত্র।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কোরিয়ালি গ্রামের ঝাঙ্গরপাড়ার মোরসেলিমের বাড়িতে গিয়ে সোমবার এই আর্থিক পুরস্কার তুলে দেন এনএফ রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। আর এই দেড় হাজার টাকা পুরস্কার ঘিরে মালদহের রাজনৈতিক মহলে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলার সহ-সভাপতি বাবলা সরকার বলেন, “বিজেপি সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে রেলের আধিকারিক সেই ছোট্ট ছেলেটির হাতে সামান্য অর্থ তুলে দিয়েছেন। এটা খুবই নিন্দনীয় বিষয়। দু’লাখ টাকাও নয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়ে মাত্র কয়েক টাকা পুরস্কার! বিজেপির কোনও লজ্জা নেই।” পুরস্কারের বহর দেখে বিতর্ক শুরু হয়েছে সব মহলেই।
শুক্রবার দুপুরে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মোরসেলিমের উপস্থিত বুদ্ধিতে বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় শিলচরগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এনএফ রেলের কাটিহার ডিভিশনের অন্তর্গত মালদহের ভালুকা রোড স্টেশন পেরনোর সময় মাত্র দশ বছরের বালকের বুদ্ধিতে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় সে হঠাৎ লক্ষ্য করে আপ লাইনে বেশ কিছু অংশের মাটি বৃষ্টির জন্য সরে যায়। তড়িঘড়ি নিজের পরনে থাকা লাল টি-শার্ট খুলে রেললাইনে দাঁড়িয়ে সংকেত দিতে থাকে চালককে। লাল সংকেত দেখে চালক এমারজেন্সি ব্রেক কষেন। ট্রেনটি দাঁড় করান। বড়সড় ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় যাত্রীবাহী সুপারফাস্ট ট্রেন। তার ফলে কয়েকশো যাত্রীর প্রাণ বাঁচে।
ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় রাতারাতি ‘হিরো’ হয়ে যায় সে। বুদ্ধি আর দুঃসাহসিকতা দেখে সোশাল মিডিয়ায় তার প্রশংসার ঝড় ওঠে। সব মহল থেকেই ওই খুদেকে পুরস্কৃত করার দাবি উঠেছিল। কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার বলেন, “আমরা রেলের তরফ থেকে সামান্য কিছু আর্থিক অনুদান এবং তাকে মানপত্র প্রদান করেছি। আগামী দিনে ওর জন্য কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে।” কেন এত কম অনুদান? সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “উপস্থিত বুদ্ধিতে ছেলেটি খুব সাহসিকতার কাজ করেছে। ওর জন্য আমরা নিশ্চয়ই কিছু ভাবব। আগামী দিনে ওর যাতে পড়াশোনার কোনও সমস্যা না হয় সে বিষয়টি আমি দেখব। আমিও তাকে সাহায্য করব। রেলের নিয়ম অনুযায়ী তাকে ওই সামান্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। রেলের নিয়মে সেটাই রয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.