ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মোবাইলে অনলাইন গেমের (Online Game) নেশা কেড়ে নিল দু’দুটো তরতাজা জীবনকে। স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা। সেই সঙ্গে সাড়ে পাঁচ বছরের শিশুকে শ্বাস রোধ করে খুন। তারপর পাশের ঘরে সিলিং ফ্যানে গলায় দড়ি নিয়ে আত্মঘাতী (Suicide) হলেন রেল কর্মচারী। রবিবার দুপুরের দিকে পুরুলিয়ার রেল শহর আদ্রার রেল আবাসনে এই ঘটনায় হতভম্ব আবাসনের বাসিন্দারা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে। স্ত্রীর জবানবন্দি
নেওয়া হবে।”
আদ্রা থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃত রেল কর্মচারীর নাম অমরচন্দ্র মোদক, ও তার সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে অঙ্কিতা মোদক। ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী সে। কাশিপুরের সিমলা গ্রামের আদি বাসিন্দা দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী অমরচন্দ্র মোদক। রেল কর্মচারীর সুবাদে আদ্রা রেল কোয়ার্টার্সে পরিবারকে নিয়ে থাকতেন তিনি। সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে, স্ত্রী ছাড়াও তার বৃদ্ধা মা রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কাজের ফাঁকে নয়, দিনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই মোবাইলে গেম খেলার নেশায় বুঁদ থাকতেন ওই রেল কর্মচারী। স্ত্রী নিষেধ করলে ঝামেলা হত। মোবাইল অনলাইন গেমে প্রথমদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা জিতেছিলেন তিনি। আর এই টাকা জেতার লোভেই মারাত্মকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই অনলাইন মোবাইল গেমে।
সম্প্রতি এই গেম খেলতে গিয়ে হারতে হারতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ঋণ হয়ে গিয়েছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই ঋণের বোঝা মেটাতে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরাও সাহায্য করছিলেন। কিন্তু সাহায্য করলে হবে কি? মোবাইল গেমে বুঁদ হয়ে যাওয়া ওই রেল কর্মচারী ওই খেলা থেকে সরে আসতে পারেননি। ফলে খেলায় হারতে হারতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল ঋণের বোঝা।
সম্প্রতি বাড়িতে এমনকি অফিসে চলে আসতেন পাওনাদাররা। অপমান করতেন বলে অভিযোগ। দিন দিন এই বিষয়টির সঙ্গে আর পেরে উঠছিলেন না তিনি। তাই রবিবার ছুটির দিন বৃদ্ধা মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার ছক করেন।
এদিন তিনি একবারই ঘর থেকে বার হয়েছিলেন তার মাকে বাসে তুলতে। আদ্রা রেল হাসপাতালে ভরতি থেকে এমন কথাই বলছেন রেল কর্মচারীর স্ত্রী। ২৮ বছরের স্ত্রী জবা মোদক বলেন, “মোবাইলে মারাত্মকভাবে গেম খেলতো। প্রথমদিকে কয়েক লাখ টাকা জেতার পর হারতে শুরু করে। ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে কয়েক লক্ষ টাকায় গিয়ে পৌঁছায়। সেই ঋণের বোঝা আমরা শোধ করতে পারছিলাম না। কিন্তু এভাবে ছোট্ট মেয়েটাকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হবে ভাবতেই পারছি না। আমাকে কেন বাঁচিয়ে রাখল? শেষ করে দিতে পারতো।”
স্ত্রীর প্রাথমিক অনুমান, দুপুরের খাবারে কোনও তরকারিতে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন তার স্বামী। ফলে দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে সহজেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। হয়তো তার স্বামী ভেবেছিলেন, তিনি মারা গিয়েছেন। ঘুমের মধ্যেই বমি করেন তিনি। জ্ঞান ফিরতেই দেখেন মেঝেতে মেয়ের মৃতদেহ। গলায় কালশিটে দাগ। পাশের ঘরে ঝুলছে স্বামী। এই অবস্থাতেই তিনি আবাসনের বাসিন্দাদের জানালে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তারা মৃতদেহ উদ্ধার করে। স্ত্রীকে ভরতি করা হয় আদ্রা রেল হাসপাতালে। মোবাইল গেমের নেশা যে এমন পরিণতি হবে তা ভাবতেই পারছে না রেলশহর আদ্রা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.