দীপঙ্কর মণ্ডল ও নব্যেন্দু হাজরা: ছড়িয়ে আছে রক্তমাখা জুতো। সিঁড়িতে রক্তের ছাপ। প্ল্যাটফর্ম থেকে গড়িয়ে রেললাইনে পড়ে থাকা ট্রলি ব্যাগটা কার? নাঃ, সেদিকে কারও কোনও হুঁশ নেই। শুধুই বাঁচার তাগিদ। আর প্রিয়জনকে হাতড়ে বেড়ানোর চেষ্টা। “দাদা, আপনার মোবাইলটা দেবেন? আমার হাজব্যান্ডকে পাচ্ছি না। প্লিজ দিন না। ওঁর কিছু হয়নি তো?” মঙ্গলবার রাতে সাঁতরাগাছি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আকুল আকুতি নববধূর। ট্রেন থেকে নেমে ফুটব্রিজ দিয়ে হাঁটছিলেন। কিন্তু মুহূর্তের ভিড়ে-ধাক্কাধাক্কিতে হাতছাড়া স্বামী। ঘটনার পর তখন প্রায় দু’ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তবুও হদিশ মেলেনি। সহযাত্রীর থেকে মোবাইল পেলেও স্বামীর খোঁজ পাননি। কারণ তিনি ‘নট রিচেবল।’
[সাঁতরাগাছি দুর্ঘটনায় রেলকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা]
দুর্ঘটনার পর ঘড়ির কাঁটায় সময় এগিয়েছে। কিন্তু আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি সাঁতরাগাছি স্টেশন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কেউ খুঁজে চলেছেন ছিঁড়ে যাওয়া সোনার হার। কেউ বা সঙ্গে থাকা মোবাইল। কেউ আবার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে গিয়েছেন। পা থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। ছড়ে যাওয়া হাতে লেগেছে কাদা। কিন্তু কারও হুঁশ ছিল না সেদিকে। যেন প্রাণ ফিরে পাওয়ার ‘গিফটে’ যন্ত্রণা ভুলেছিলেন তাঁরা। কেউ কেউ বিশ্বাসই করে উঠতে পারছিলেন না যে, বেঁচে আছেন। কয়েক মিনিটের হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি, পদপিষ্ট। সেই সময়ের স্মৃতি মনে পড়লেই প্ল্যাটফর্মে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকক্ষণ পর কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন, “দম আটকে আসছিল। পড়ে যেতে শুধুই লাথি। উঠতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না। সব শক্তি দিয়ে ফুটব্রিজের রেলিং ধরে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। ভাগ্যিস সাইডে ছিলাম। না হলে আর বাঁচতাম না। আমি একাই ছিলাম। ব্যাগ, মোবাইল সব গিয়েছে। প্রাণে বেঁচে আছি এই রক্ষা।” শুধু তিনি একা নন, প্রাণে বেঁচেছেন এটুকুতেই তখন খুশি অনেকে।
কিন্তু, সাঁতরাগাছি স্টেশনে ফুটব্রিজে কীভাবে ঘটল এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা? রেলের সাফাই, ঘটনার সময়ে একসঙ্গে বহু যাত্রী উঠে পড়েছিলেন ফুটব্রিজে। অতিরিক্ত যাত্রী চাপেই ঘটে বিপত্তি। ঘটনার তদন্ত করার জন্য ৪ সদস্যের কমিটি গড়েছে রেল। মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ও গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।
[ শাশুড়িকে তালাবন্ধ করে ভ্রমণে বউমা, খিদের জ্বালায় কান্না বৃদ্ধার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.