শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: সন্ন্যাস গ্রহণের আগে আত্মশ্রাদ্ধ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর পরিষদরা৷ সেই রীতি মে্নে আজও সন্ন্যাস গ্রহণের আগে আত্মশ্রাদ্ধ করতে হয় রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের৷ রায়গঞ্জের বাসিন্দা নিমাইচন্দ্র রায় ও তাঁর একমাত্র দেবাশিস অবশ্য সন্ন্যাসী নন৷ নেহাতই ছাপোষা গৃহস্থ৷ কিন্তু, আমিত্ব ঘোচাতে জীবিত অবস্থায় নিজেদের শ্রাদ্ধ করলেন বাবা ও ছেলে! শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর আমন্ত্রিতদের দই-চিড়ে মিষ্টিও খাওয়ালেন তাঁরা৷ বেনজির কাণ্ড রায়গঞ্জের দক্ষিণ গোয়ালপাড়ায়৷
[ভিন গোত্রে প্রেমের শাস্তি, প্রেমিককে মারধর করে জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো হল গ্রামে]
বৃহস্পতিবার দুপুর৷ রায়গঞ্জের দক্ষিণ গোয়ালপাড়ার রায় বাড়িতে চলছে বাবা-ছেলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান৷ বাড়ির উঠোনে রীতিমতো মণ্ডপে বেঁধে একে অপরের শ্রাদ্ধ করছেন বছর চুয়াত্তরের নিমাইচন্দ্র রায় ও তাঁর একমাত্র ছেলে দেবাশিস৷ বাড়ির বাইরে তখন কৌতূহলী পড়শিদের ভিড়৷ যতক্ষণ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চলেছে, ততক্ষণ অবশ্য বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারেননি কেউ৷ আশ্চর্যজনকভাবে প্রধান ফটক ভিতর থেকে তালা দেওয়া হয়েছিল৷ শ্রাদ্ধের পর আমন্ত্রিতদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় এবং রীতিমতো পাত পেড়ে খাওয়ানোও হয় তাঁদের৷ আমন্ত্রিত ছাড়া রায়বাড়িতে বাকিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল৷
স্ত্রী সুনীতি রায় মারা গিয়েছেন ন’বছর আগে৷ একমাত্র ছেলে দেবাশিসকে নিয়ে ছিমছাম সংসার নিমাইচন্দ্র রায়ের৷ বছর ছেচল্লিশে্র দেবাশিস বিয়ে করেননি৷ পেশায় তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক৷ আবার ফটোগ্রাফিও করেন তিনি। বাড়ির লাগোয়া একটি স্টুডিও রয়েছে তাঁর৷ আর বহুদিন হল চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন নিমাইবাবু৷ সর্বক্ষণ বাড়িতেই থাকেন তিনি৷ কিন্তু, হঠাৎ জীবিত অবস্থায় নিজেদের শ্রাদ্ধ কেন করলেন বাবা ও ছেলে? রায়গঞ্জ শহর জুড়ে নানা জল্পনা৷ দেবাশিস রায় বলেন, ‘আমি বলে কিছু নেই। আমিত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেতেই এই পারলৌকিক অনুষ্ঠান। জীবিত অবস্থায় আমাদের মধ্যে নানা ভ্রম ঘিরে ধরে। যে সৃষ্টি কর্তা, তাঁকে ভুলে যাই। তাই আসলে যেখান থেকে আমাদের সৃষ্টি তাঁকে স্মরণ করার লক্ষ্যেই এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।‘ একই সুর প্রৌঢ় নিমাইচন্দ্র রায়ের গলায়ও৷
ছবি: দীপিকা দে
[রেহাই নেই গরুরও, ধর্ষণ করে অবলা প্রাণীকে হত্যা যুবকের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.