ফাইল ছবি।
শংকর রায়, রায়গঞ্জ: দাবি মতো মেলেনি পণের টাকা। তাই বিয়ের ছ’মাসের মাথাতেই স্ত্রীকে চলন্ত বাইক থেকে রাস্তায় ফেলে চাকায় পিষে খুন করল করল স্বামী। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বড়ুয়া পঞ্চায়েতের গণেশপুর এলাকার এ ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই শিউরে উঠেছেন স্থানীয়রা।
রবিবার সকালে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই বধূর। মৃতার নাম সারজুনা খাতুন (২৪)। এই ঘটনায় মৃতার বাবা রায়গঞ্জের মহিলা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন অভিযুক্ত স্বামী সামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্ত পলাতক। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর নভেম্বরের গোড়ার দিকে রায়গঞ্জের শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর ঘোড়াডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা সামিদুর রহমানের সঙ্গে সারজুনা খাতুনের বিয়ে হয়। স্বামী দিল্লিতে একটি প্লাইউড কারখানায় মজুরের কাজে কর্মরত। বিয়েতে পণ বাবদ দুই লক্ষ টাকা এবং একটি বাইক দেওয়া হয় সামিদুরকে। কিন্তু পণ বাবদ তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আর বকেয়া পণ না মেলাতেই রূদ্রমূর্তি ধারণ করে সারজুনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিয়ের মাস না গড়াতেই বধূকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাত বলে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ। অত্যাচার থেকে বাঁচতে গত ৩ জুলাই স্বামীকে ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন সারজুনা। তারপর থেকে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। শনিবার দুপুরে স্বামী সামিদুর রহমান দিল্লি থেকে ফিরে সোজা স্ত্রীকে নিতে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছান। সেখান থেকে স্ত্রীকে বাইকের পিছনে বসিয়ে হেমতাবাদের বাঙালবাড়ি এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যান। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। তারপর রাতে বড়ুয়ার শ্বশুরবাড়ির অদূরে গণেশপুর এলাকায় পৌঁছাতেই চলন্ত বাইক থেকে স্ত্রীকে ফেলে দেয় সে। এরপর রাস্তায় লুটিয়ে পড়া স্ত্রীর শরীরের উপর দিয়েই বাইক চালিয়ে পিষে গা ঢাকা দেয় স্বামী। প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনটাই জানিয়েছে।
বধূর বাবার বাড়িতে স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। এদিন সকালে মৃত্যু হয় ওই বধূর। তবে রাতে একাধিকবার থানায় ফোন করা সত্বেও হাসপাতালে কোনও পুলিশ আসেনি বলে মৃতার দাদা আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন।
নিহতের বাবা বদির মহম্মদের অভিযোগ, “তিন লক্ষ টাকা পণ দাবি করেছিল জামাই। জমি বিক্রি করে দুই লক্ষ টাকা এবং একটি বাইক দেওয়া হয়েছিল। বাকি টাকা পরে শোধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলল।” পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল অবশ্য বলেন, ‘‘ বধূর পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০৪ বি ধারায় খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তকে ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.