অভয়ার প্রতিবেশী কাকু সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
অর্ণব দাস, বারাকপুর: “সরকার, স্থানীয় বিধায়ক বা কাউন্সিলর, কারোর সঙ্গে আলোচনা করে কিছু করিনি। আমাকে কেউ প্ররোচিত করেনি।” প্রতিবেশী কাকু সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আর জি করে নির্যাতিতার মা-বাবার সরব হওয়া নিয়ে সোমবার ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি। বললেন, “তদন্তের স্বার্থে এতদিন মুখ খুলিনি। কিন্তু যে কথাগুলি বলা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সঞ্জয় নয় সঞ্জীব অপরাধী। রাস্তাঘাটে বেরতে পারছি না, আমার সামাজিক জীবন নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। তাই নীরব না থেকে সত্যিটা সামনে আনা উচিত বলে মনে করেই বলছি, দীর্ঘদিন ধরে আমি পরিবারকে চিনি-জানি। ওদের অসহায় করুণ অবস্থার সুযোগ নিয়ে এই কথাগুলি বলানো হচ্ছে।”
এরপরই মর্মান্তিক ঘটনার দিনের বিবরণ তুলে ধরে তিনি জানান, হাসপাতালে যা হয়েছে পরিবার, আন্দোলনকারী চিকিৎসক সকলকে সঙ্গে নিয়েই হয়েছে। সেদিন হাসপাতালে একের পর এক যে কটা দাবি করা হয়েছিল সব কটি প্রশাসন মেনে নিয়েছিল। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের দাবি মেনেই ময়নাতদন্ত হয়েছে। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সম্মতিতেই মর্গ থেকে দেহ বেরিয়েছে। তাঁর কথায়, “যে এফআইআরের ভিত্তিতে কেস হয়েছে সেটা আমার হাতের লেখা। তাতে আমিই লিখেছিলাম, নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই এফআইআর করতেও তো কেউ বাধা দেয়নি।”
তড়িঘড়ি সৎকারের অভিযোগ প্রসঙ্গেও এদিন খোলামেলা উত্তর দেন সঞ্জীববাবু। বলেন, “মৃতদেহ পাড়ায় আসার পর দেড় দু’ঘণ্টা রাস্তায় ছিল। ঘরে নিয়ে যাওয়ার পরে চল্লিশ মিনিটের বেশি সময় ছিল। তখনই তো পরিবার দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলতে পারত দেহ সৎকার করতে দেব না। মা-বাবা বা কোনো আত্মীয় আমাকে তো বলেইনি, অন্য কাউকেও দেহ সংরক্ষণ করবে বলেছে বলেও শুনিনি। টালা থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তাহলে দেহ আসার পরে তো ঘোলা থানায় সৎকার করতে চায় না বলে জানাতে পারত। বাড়ির সামনেও তো তখন অন্য কেউ বা কোনো রাজনৈতিক দল এ নিয়ে বিক্ষোভও দেখায়নি।”
যদিও এদিন ফের এনিয়ে সরব হয়ে তরুণী চিকিৎসকের বাবা জানিয়েছেন, “উনি (সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়) জানেন কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, তাই গাইড করার জন্যই ওঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গাইড করার বদলে আমার যাতে ক্ষতি হয়, সেগুলি করেছে। ভুল পথে চালিত করেছে।” এনিয়ে প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের জবাব, “এই ধরনের কোনো হত্যার সম্মুখীন হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না বা আমি আইনজীবীও নই। নিজের বিচারবুদ্ধিতে যতটুকু করা যায় করেছিলাম।” তদন্তের স্বার্থে আদালতে যতবার যেতে হবে জানিয়ে ফের নিজের সপক্ষে তাঁর সংযোজন, “সেদিন পুলিশের সঙ্গে আমার ঝগড়ার ভিডিও রয়েছে। যদি তাই হত আমি কেন ঝগড়া করতে যাব! আমার ফোন দুটি তো সিবিআই নিয়েছিল। তদন্তে কারোর সঙ্গে কথোপকথন, নির্দেশ সেই রকম কিছু তো পাইনি। তারপরেও আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অপপ্রচার হচ্ছে, বলবো আমার যদি কোনো অপরাধ থাকে তাহলে সেটা তদন্ত করে বার করে আমাকে সাজা দেওয়া হোক। কিন্তু এভাবে যেন বিভ্রান্তি না ছড়ানো হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.