সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কারও মাথা ওড়না দিয়ে ঢাকা। কারও মুখে মাস্ক। ছিপছিপে চেহারার তিন তরুণ, সঙ্গে এক যুবক। পুরভোটের মুখে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার ঝালদায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাসিন্দাদের আধার কার্ড দেখতে চাইছেন। চাইছেন ভোটার কার্ড নম্বর। সেইসঙ্গে বাড়ি এবং সদস্যদের ছবিও তুলছেন তাঁরা। পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর জেনে তা তালিকাভুক্ত করছেন এই চারজন। এরা কারা? এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় ঝালদা। ২০২১ সালের জনগনণার কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাহলে এখন কীসের সমীক্ষা? NPR, NRC আতঙ্কে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষে থাকা ঝালদায় এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বুধবার দুপুর নাগাদ ঝালদার একাধিক ওয়ার্ডে তিন তরুণী ও এক যুবকের দল বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য চাওয়ায় রীতিমত সরগরম এলাকা। খবর পৌঁছে যায় পুরসভাতেও। ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে লোকজন পাঠান। কিন্তু ততক্ষণে ওই দল এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে। তাহলে ওরা কারা? ২৪ ঘন্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও উত্তর মিলছে না। ঝালদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুমন্ত কবিরাজ বলেন, “এই বিষয়ে আমরা এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে স্থানীয় তৃণমূল-সিপিএম নেতৃত্বের মতে, এই ঘটনার নেপথ্যে গেরুয়া শিবির।
জঙ্গলমহলের এই জেলার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকায় নাগরিকপঞ্জির আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। আর সেই আতঙ্কের মাঝেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে তরুণীদের তথ্য সংগ্রহ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ঝালদায়। এর মোকাবিলা করতে মাঠে নেমে গিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। ঝালদা শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার বলেন, “বুধবার দুপুরেই একাধিক ওয়ার্ড থেকে বিষয়টি আমার কানে আসে। শোনামাত্রই আমি ওয়ার্ডগুলিতে কয়েকজনকে পাঠাই। কিন্তু তার আগেই তাঁরা পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে কয়েকজন তাঁদের ছবি তুলে রেখেছেন। ঝালদা পুর শহরের মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরামর্শ দিয়েছেন যে কাউকে কোনও তথ্য দেবেন না। তাঁর সেই বার্তাকে সামনে রেখেই বলছি, এসব বিজেপির কাজ। পুরভোটের মুখে এই প্রান্তিক পুর শহরে তারা অশান্তি পাকাতে চাইছে। প্রয়োজনে আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা মাইক নিয়ে প্রচার করব।”
এসব আশ্বাস সত্ত্বেও একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমজনতার মনে – ওরা কারা? বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য নিয়ে কী করতে চাইছেন? একাধিক ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কথায়, “আধার কার্ড দেখিয়ে ভোটার কার্ডের নম্বর দিয়ে যখন জিজ্ঞাসা করছি, আপনারা কারা? এই তথ্য নিয়ে কী করবেন? তখন উত্তর মিলছে, সঠিক সময়ে জানতে পারবেন। আপনাদের ভালর জন্যই নেওয়া হচ্ছে।” তাতেই সন্দেহ বেড়েছে সকলের। কারণ, ২০২১ এর জনগণনার জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে এপ্রিলে। কিন্তু এপ্রিল আসতে এখনও দেরি। তার মধ্যে সব কিছু গোপন রেখে তথ্য সংগ্রহের ঘটনায় ক্ষোভ জমছে বাসিন্দাদের। সিপিএমের ঝালদা এরিয়া কমিটির সম্পাদক উজ্জ্বল চট্টরাজ বলেন, “এটা আরএসএস ও বিজেপির পরিকল্পিত কাজ। বিভাজনের রাজনীতিকে পরাস্ত করতে আমরাও মানুষের কাছে যাচ্ছি।” বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কথা, “পুরভোটের আগে এটা তৃণমূলের চাল। বিজেপিকে বদনাম করতেই পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.