নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কুড়ি বছর পর বিজেপির দুর্গ ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে পতন হল বিজেপির। কেবল নিজের কেন্দ্রে বিজেপির দুধকুমার মণ্ডল নিজের জয় ধরে রাখলেন৷ তাঁকে ঘিরে ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন৷
ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে দু’দুবারের প্রধান ছিলেন তিনি৷ বিধানসভার প্রার্থী ছিলেন। এবার তিনি কেবল নিজের কেন্দ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেন। নিজের পঞ্চায়েত ধরে রাখার ক্ষমতাও হারালেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি। বিজেপির একাংশের মতে নিজের গ্রাম ব্রাহ্মণবহড়ার ১৫২ নম্বর বুথে জয়ী হতে দিয়ে তাঁকে গ্যারেজ করে দেওয়া হল৷ দুধকুমার অনুগামীদের মতে দাদাকে দায়িত্ব না দিলে বীরভূমে ‘বিজেপির গুজরাটের’ কী হাল হয় তা দেখিয়ে দিলেন দুধকুমার। তবে, এপ্রসঙ্গে দুধকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাকে এলাকার নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাই হারা জেতা প্রসঙ্গে বলবেন দলীয় নেতারা।’’
জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘সীমাহীন সন্ত্রাসের মুখে পড়ে কর্মকর্তারা যতটা পেরেছেন, প্রতিরোধ করেছেন। মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারলে ফল অন্য হত৷’’ ময়ূরেশ্বরের দুধকুমার মণ্ডল ছিলেন বীরভূম বিজেপির মুখ৷ কিন্তু প্রাক্তন এই জেলা সভাপতিকে ঘিরে দলে বিতর্কও চরমে উঠেছিল৷ ফলে, তিনি কখনও রাজ্য নেতৃত্বের ওপর গোঁসা করে জেলা সভাপতির পদ ছেড়েছেন, কখনও রাজনীতি ছেড়ে সন্ন্যাস নিয়েছেন৷ আবার সন্ন্যাস ভেঙে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রচারেও বেরিয়েছেন তিনি৷ রাজনীতি থেকে বসে যাওয়া সেই দুধকুমারকে এবার একরকম জেলা নেতৃত্বের কাছে ‘নখক্ষত’ দিয়ে তাঁর টিকিট নিতে হয়েছিল৷ ‘নখক্ষতে’র কারণ হিসাবে জেলা নেতৃত্ব জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের শুরুতেই তিনি অনুগামীদের নিয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ফের রাজনীতিতে ফিরতে চাইছিলেন৷ কিন্তু সমর্থন না পেয়ে পিছিয়ে আসেন বলে দলের সূত্র জানাচ্ছেন।
যদিও এই নির্দল প্রার্থী প্রসঙ্গ দুধকুমার মণ্ডল অস্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি বিজেপির কর্মী হিসাবেই থাকতে চাই।’’ তবে তাঁর এই জয় প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেছেন, ‘‘যেদিন দুধকুমার বোলপুরে আমার বাড়িতে এসেছিল সেদিনই বুঝেছিলাম, মুখে যত হম্বিতম্বি, কাজে ততটা নন। ওঁকে ওঁর দল পঞ্চায়েতের মধ্যেই কোণঠাসা করে রেখে দিল৷’’ এলাকাবাসীদের দাবি, ময়ূরেশ্বর দুই ব্লকের ওই ময়ূরেশ্বর কেন্দ্রে যেখানে এখনও বিজেপির বিদায়ী সদস্য ১২ জন, সেখানে দুধকুমার ও চাললুজোয়া কেন্দ্রে রুনু বাগদি ছাড়া কেউ জয়ী হতে পারলেন না। গ্রামের বিজেপির বহু নেতা কর্মী দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা বিরোধী দলে থেকে সিপিএমের আমল থেকে তৃণমূলের আমলেও বঞ্চিত হচ্ছি। তাই গ্রামে আমরা তৃণমূলকে জয়ী করেছি।’’ এর পিছনে দুধকুমার মণ্ডলের ভূমিকা কতটা সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.