সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এক পকেট ডায়েরিতেই ৫২ প্রকল্পের উন্নয়নের খতিয়ান। ২০১১ সালে জঙ্গলমহল পুরুলিয়া কেমন ছিল, আর তার ন’বছর পরে ২০১৯–এ জেলার অবস্থা কেমন হয়েছে। এক মলাটে তা তুলে ধরেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। রবিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের রিভিউ মিটিংয়ে সেই পকেট ডায়েরি প্রকাশিত হয়। ‘নিউ লাইটস, নিউ হাইটস…’ নামে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ওই পকেট ডায়েরি প্রশংসিত হয়েছে প্রশাসনিক বৈঠকে। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন যে কাজ করেছে তার ছবি ও তথ্য সহ ‘আরোহণ’ নামেও একটি বই এদিনের বৈঠক থেকে প্রকাশ হয়।
কী আছে এই পকেট ডায়েরিতে? রাজ্য সরকারের পুরুলিয়া নামে এই পুস্তিকায় কৃষি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, গ্রামীণ রাস্তা, বাংলা আবাস যোজনা, অপুষ্টি প্রতিরোধ, প্রাণিসম্পদ বিকাশের কাজ, বিদ্যুৎ, শ্রমিক সুরক্ষা যোজনা, কন্যাশ্রীর মত সাফল্যে ভরা এই জেলার ৫২টি কাজের খতিয়ান এক ঝলকে তুলে ধরা হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, ওই ডায়েরিই বলে দেবে উন্নয়নের নিরিখে রাজ্যে আজ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এই বনমহল পুরুলিয়া। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “এই ডায়েরি একেবারে তথ্য সম্বলিত উন্নয়নের খতিয়ান। ২০১১ তে এই জেলা কোন জায়গায় ছিল। আর এখন ২০১৯–এ কোথায় রয়েছে একনজরে এই পকেট ডায়েরিতে আমরা তা তুলে ধরেছি।”
‘নিউ লাইটস, নিউ হাইটস…’ পুস্তিকা বলছে, এই জেলায় কৃষি ক্ষেত্রে চাষিদের সুবিধায় ২০১১ সালের নিরিখে পাঁচ গুণ টাকা বেশি খরচ করা হয়েছে। ২০১০–১১ আর্থিক বছরে যেখানে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে ২০১৮–১৯ আর্থিক বছরে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন খরচ করে ৬৮ কোটি ২৬ লাখ। বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে তুলে ধরার কথা বলেন। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সেই কথা মাথায় রেখে এই দল তৈরিতে উদ্যোগী হয়। ২০১১ সালে এই জেলায় স্বনির্ভর দল ছিল ১৬,৫৭১টি। ২০১৯–এ তা দাঁড়িয়েছে ৩৩,৩৭৬–এ। ফলে এই কাজ ২০১১ সালের নিরিখে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ডায়েরিতে সাফল্যের প্রকল্পগুলি শুধু ২০১১ আর ২০১৯–র নিরিখে তুলে ধরাই নয়। ওই কাজে বা প্রকল্পে বরাদ্দ কত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে সামনে আনা হয়েছে সেই বিষয়টিও। এই গোষ্ঠীদেরকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে এই জেলা। ২০১১–র নিরিখে এই কাজ ১৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনাতেও ২০১৯ সালে ১৩৮ শতাংশ কাজ বেড়েছে। অর্থাৎ ২০১১-তে যেখানে ৯০৭ কিমি রাস্তা তৈরি হয়। সেখানে চলতি বছর রাস্তার কাজ হয়েছে ২১৬৪ কিমি। সাফল্য এসেছে বাংলা আবাস যোজনার মত গৃহ প্রকল্পেও। ২০১১–১২ আর্থিক বছরে যা ছিল ৪৬৫৪। ২০১৮–১৯–এ তা দাঁড়িয়েছে ৩০,৪২০। তবে চলতি আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন ৫০,২২২টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
বাম জমানায় এই জেলায় প্রায় ৯০০–র বেশি পিছিয়ে পড়া গ্রাম ছিল। আর অপুষ্টিতে আক্রান্ত ছিলেন অধিকাংশ মানুষ। ২০১৯–এ এসে যে আর সেই ছবিটা নেই তা তথ্য দিয়ে জানান দিচ্ছে এই ‘নিউ লাইটস, নিউ হাইটস…’ ডায়েরিটি। ২০১০–১১ আর্থিক বছরে এই জেলা অপুষ্টিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৭.৯ শতাংশ। ২০১৮–১৯–এ তা কমে হয়েছে ১৫.২ শতাংশ। ফলে এখানেও প্রায় ২২ শতাংশ মত অপুষ্টির হার কমানো গিয়েছে। কাজের হার বাড়ানোর নিরিখে এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্প। ২০১০–১১ আর্থিক বছরে ৫৩,৪৪৭ জনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনতে পারে প্রশাসন। ২০১৮–১৯ তা ছুঁয়েছে ২,২৭,১৯৯–এ। বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২৫ শতাংশ। ফলে আক্ষরিক অর্থেই এই ৫২ প্রকল্পে প্রশাসন আলো ফেলে জেলাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.