সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: স্বাধীনতার পর পার হয়ে গিয়েছে সাত দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু আজও রাস্তা পায়নি দাঁতিয়া। তাই খানাখন্দে বেহাল রাস্তায় রোগীদের হাসপাতাল নিয়ে যেতে ভরসা মধ্যযুগীয় ‘ডুলি’। বারবার মিলেছে রাস্তা সারাইয়ের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তাই সার। রাস্তা না পেয়ে হতাশ স্থানীয়রা।
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির ঝালদা এক নম্বর ব্লকের মাঠারিখামার গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁতিয়া গ্রাম। প্রায় তিনশো পরিবারের বসবাস। অধিকাংশই চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। সেই গ্রাম থেকে ব্লক সদর ঝালদা আসতে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ খানাখন্দ দিয়েই যেতে হয়। ওই গ্রাম থেকে হুড়লুং মোড় প্রায় তিন কিলোমিটার আসতে পারলে তবেই ইচাগ-মাঠারিখামার রাস্তা মেলে। সেখান থেকে যাওয়া যায় ঝালদা। তাই সেখানে চার চাকার গাড়ি না ঢোকায় গ্রামের অসুস্থ মানুষজনদেরকে হাসপাতালে আনতে ভরসা সেই ‘ডুলি’। কিছুদিন আগে অগ্নিদগ্ধ দু’জনকে এইভাবেই ‘ডুলি’তে করে হাসপাতালে নিয়ে আসার দৃশ্য দেখে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’জনই মারা যান। কিন্তু এই ‘ডুলি’ কি? বাবুই ঘাসের দড়ি দিয়ে খাটিয়া তৈরি করে তার চার দিকে দড়ি দিয়ে মাঝখানে বাঁশ বেঁধে পালকির মতো করে নিয়ে যাওয়া হয়। চার জনের কাঁধে ভর দিয়ে চলে এই ‘ডুলি’। ইতিহাসের পাতায় মধ্যযুগে যা ছিল। বৃষ্টি হলে সেই ‘ডুলি’তে ত্রিপল দিয়ে আচ্ছাদন করে দেওয়া হয়। যাতে রোগীর গায়ে বৃষ্টির জল না লাগে।
প্রশ্ন একটাই, ওই গ্রামে রাস্তা তৈরি করতে কোন ব্যবস্থাই নেবে না প্রশাসন? তবে ঝালদা এক নম্বর ব্লকের বিডিও রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে এই রাস্তা নির্মাণ হবে। ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।” কিন্তু অযোধ্যা পাহাড়তলির দাঁতিয়া যে বহুদিন ধরে শুনে আসছে তাদের গ্রামে রাস্তা হবে। ফলে এটাও আরেকটা প্রতিশ্রুতি নয় তো? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে উপেক্ষিত এই গ্রামবাসীদের মনে। ওই গ্রামের বাসিন্দা দীপক মাহাত ও গোলোক সিং মুড়া বলেন, “কতবার শুনেছি এই গ্রামে নাকি রাস্তা হবে? কিন্তু শুধু শোনাই সার। বাস্তবে আর কিছু হয় না। রাস্তার এমন অবস্থা যে চার চাকার গাড়ি ঢোকে না। একটু বৃষ্টি হলেই অবস্থা আরও খারাপ হয়। তাই অসুস্থ মানুষজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। তখন সেই ‘ডুলি’ ছাড়া আর উপায় থাকে না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, রাস্তাটা হলে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছতে তাদের এত কষ্ট হত না। আসলে মাঠারিখামার পঞ্চায়েত এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদাসীন ছিল বলে অভিযোগ। অধিকাংশবারই এই গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেসের দখলে। কয়েকবার ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকেরও। কিন্তু রাস্তা করতে পারেনি কেউ। তাই ‘ডুলি’তে চড়েই প্রাণ হাতে নিয়ে অসুস্থ মানুষজনকে নিয়ে যেতে হয় এই দাঁতিয়াকে। ওই এলাকার বাসিন্দা তথা মাঠারিখামার গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য অজয় মাহাত বলেন, “ওই রাস্তা এবার হয়ে যাবে। রাস্তা হয়ে গেলে আর ‘ডুলি’র প্রয়োজন পড়বে না।” মধ্যযুগীয় ‘ডুলি’ ভুলতে আবার আশায় বুক বাঁধছে দাঁতিয়া।
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.