সুমিত বিশ্বাস ও অমিতলাল সিং দেও: সেই অতীতের পুনরাবৃত্তি। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের নোয়াহাতু বিটের টাটুয়াড়া গ্রামে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাকে পিটিয়ে মেরেছিল এলাকার মানুষজন। আর ঠিক এক দশক পরে ওই চিতা বাঘের আতঙ্কেই সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় একের পর এক গ্রামে হামলা চালিয়ে ৬ জনকে জখম করায় ইট, পাথর, লাঠি সোটা নিয়ে পিটিয়ে মেরে ওই বন্যপ্রাণকে শাস্তি দিল গ্রামের মানুষজনই বলে অভিযোগ। ঘটনা সেই টাটুয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় মেটলা গ্রামে এই ঘটনায় হতবাক পুরুলিয়া বনদপ্তর থেকে সাধারণ মানুষজন। কারণ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণিতে এই বন্যপ্রাণ এক নম্বরে রয়েছে। জঙ্গলমহলের এই জেলায় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে ধারাবাহিক প্রচার চললেও তার সুফল মিলল না। অন্তত এই নেকড়ে বেঘোরে মারার ঘটনা সেটাই প্রমাণ করছে! পুরুলিয়া বন বিভাগের নতুন ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন,”বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি।”
২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটে সাম্প্রতিককালে প্রথম চিতাবাঘ ধরা পড়ে। যদিও তার আগে থেকেই চিতাবাঘের হামলায় একের পর এক গবাদি পশু মারা যাচ্ছিল। ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা এই পাহাড়তলি এলাকায় চিতাবাঘের দাপট রয়েছে বহুদিন ধরেই। আটের দশকে একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ পুন্দাগ এলাকায় চলে আসে। পরে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। এদিকে মাস খানেক ধরে কোটশিলা বনাঞ্চলের এই সিমনি বিট এলাকায় হামলা চালাচ্ছে নেকড়েও। চিতাবাঘ যেমন ঘুরছে গ্রামে। তেমন-ই ঘুরছে নেকড়েও। ঘরের ভেতরেও ঢুকে যাচ্ছে।
সোমবার একেবারে দিনেদুপুরে বারুডি গ্রামে কৃষ্ণচরণ মাহাতো নামে এক সবজি বিক্রেতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নেকড়ে। তিনি প্রতিরোধ করলে নেকড়ে সেখান থেকে চলে যায়। এর পর ওই নেকড়ে চলে আসে বারুডি গ্রামে। সেখানে আনন্দমার্গ প্রাথমিক স্কুলে একটি নির্মাণ কাজ হচ্ছিল। সেখানে উজ্জ্বল গড়াই-র পায়ে কামড় বসায়। এরপর দুলমি গ্রামে এসে নির্মীয়মান বাড়ির সামনে বসে থাকা আট বছরের এক পড়ুয়াকে কামড় দেয়। সঙ্গে থাকা তার পিসেমশাই প্রতিরোধ করলে তার পায়ে কামড়ে পালিয়ে যায়। এর পর টাটুয়াড়া গ্রামের মাঝিডি টোলার পলাশ জঙ্গলে গিয়ে ৫৭ বছরের পুতুল মাঝি নামে এক মহিলার ওপর হামলা চালায়। সেই সময় তিনি তার চাষের জমির পাশে কাঠ কুড়োচ্ছিলেন। হাতে, পায়ে কাঁধে চোট লাগে তার। এর পরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। ওই দিন দুপুরে জখম তিনজন কোটশিলা গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান।
এর পর মঙ্গলবার সকালে বড় মেটলা গ্রামের জোড়ের পাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিলেন তিনজন। সেই সময় এক মহিলা সহ ঝাড়খণ্ডের চান্ডিলের বাসিন্দা অমর প্রামাণিক ও ওই এলাকার বাসিন্দা সীতারাম মাজির ওপর হামলা চালিয়ে কামড় দেয়। নেকড়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ লড়াই চলে ওই সীতারামের। এরপর গ্রাম জুড়ে রটে যায় চিতাবাঘ ঢুকে পড়েছে। আর সেই আতঙ্কেই এলাকার মানুষজন ইট, পাটকেল লাঠিসোটা নিয়ে ওই বন্যপ্রাণের ওপর হামলা চালালে বেঘোরে প্রাণ যায় তার। এরপর গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ওই নেকড়েটিকে একটি গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। দুপুরবেলা বনদপ্তর খবর পেলে কোটশিলা বনাঞ্চলের আধিকারিকরা সেখানে গিয়ে ওই বন্যপ্রাণের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেন। তারপর বন্যপ্রাণ-র দাহ হয় ওই বনাঞ্চলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.