সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রবি ঠাকুরের সহজ পাঠের সেই দ্বিতীয় ভাগের কথাকে হাতিয়ার করে মডেল গ্রাম গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। “আজ মঙ্গলবার। পাড়ার জঙ্গল সাফ করবার দিন।” কবিগুরুর সহজপাঠের এই শাশ্বত উদ্ধৃতিকে রেখে এবার থেকে ফি মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্যাম্পাসের জঙ্গল পরিষ্কার করে সাফ-সুতরো করবে। এই কাজের মধ্য দিয়েই সমাজ জীবনে বার্তা দিয়ে স্বচ্ছ, সুন্দর গ্রাম তৈরির সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে মডেল গ্রাম তৈরি হবে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য সেল এমন পরিকল্পনায় নিয়েছে। এই কর্মসূচিকে সফল করতে একটি থিম সঙও বানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এই কাজে উৎসাহ দিতে ব্লকের সামগ্রিক কাজের নিরিখে ফি মাসে পুরস্কারও দেওয়া হবে। এই কর্মসূচির শুরুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওই শাশ্বত উদ্ধৃতিকে থিম করে স্কুল, ব্লক ও জেলা স্তরে বসে আঁকো প্রতিযোগিতারও কর্মসূচি নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। মূলত পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উপ-সচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাসের ভাবনাতেই এই সচেতনতা মূলক কর্মসূচি সাজিয়ে তুলেছে জেলা পরিষদ।
চলতি মাসের ১৩ তারিখ থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল সাড়ে দশটায় জেলাস্তরের মূল অনুষ্ঠানটি হবে পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকে। বছরভর এই কর্মসূচি সফল করতে জেলার ব্লকগুলিতে প্রস্তুতি বৈঠক করছেন বিডিওরা। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল মডেল গ্রাম। যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ) প্রকল্পে জেলার সমস্ত গ্রামগুলিকে মডেল গ্রামরূপে ঘোষণার সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে। বর্তমানে এই জেলায় ২ হাজার ৫১৪ টি গ্রাম রয়েছে। তার মধ্যে মডেল হয়েছে ৮৪৮ টি। এখনও অনেকটাই বাকি। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাকি ১ হাজার ৬৬৬ টি মডেল গ্রাম গড়ে তুলতে রবি ঠাকুরের শাশ্বত উক্তিকে সামনে রেখে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে এই স্পেশাল ড্রাইভ বলে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। উপ-সচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “রবি ঠাকুর আমাদের হৃদয়ে, মননে। সকলের পরিচিত সহজ পাঠের সেই কথাকে হাতিয়ার করেই আমরা স্বচ্ছ, সুন্দর গ্রাম তৈরির কর্মসূচি নিয়েছি।”
এই মডেল গ্রাম গড়ার কাজে রাজ্যের নিরিখে পুরুলিয়া এখন পাঁচ নম্বরে রয়েছে। এই র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায় মডেল গ্রাম গড়ার বিষয়ে জঙ্গলমহলের এই জেলার কাজ বেশ ভালো। এই মডেল গ্রামের যোগ্যতা হচ্ছে, স্বচ্ছ দৃশ্য সুন্দর গ্রাম গড়ে তোলা। যেখানে কঠিন, তরল বর্জ্য পদার্থ প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে নিজেদেরকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রাখবে। পাশাপাশি এই সম্পর্কে সম্যক ধারণা উপলব্ধ হবে। সহজ পাঠের ওই কথাকে ব্যানারে রূপ দিয়ে এই কর্মসূচি পালন করতে হবে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ অফিস সহ স্কুল-কলেজে। প্রতিটি গ্রামে যে ভিলেজ হেলথ স্যানিটেশন ও নিউট্রিশন কমিটি রয়েছে তারা নিজেদের গ্রামকে পরিচ্ছন্ন ও পরিষ্কার রাখার জন্য গ্রামবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি এই সম্পর্কিত সমস্যা গুলি গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক অফিসের আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ওই কমিটির প্রতিটি সদস্যকে কঠিন ও তরল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ বিষয়টি জানতে হবে। যাতে তারা গ্রামের সকলকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন। বোঝাতে পারেন। এই সদস্যরাই বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলবারের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে তাদের উৎসাহিত করবে। এছাড়া ভিলেজ ওয়াটার ও স্যানিটেশন কমিটির মাধ্যমে প্রতি সংসদে বা গ্রামের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবে। সমস্যাগুলি ব্লকে জানাবে।
এছাড়া ব্লকে বিডিও, জয়েন্ট বিডিও, সভাপতি, জনস্বাস্থ্য পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ-সহ ১৪ জনের ব্লক লেভেল স্যানিটেশন কমিটি তৈরি করে সমস্ত ব্লকের ক্রিয়াকর্ম তদারকি করবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ জন সদস্য বিশিষ্ট নির্মল বাহিনী স্যানিটেশন ক্লাব তৈরি করতে হবে। যারা বিদ্যালয় সন্নিহিত এলাকার সকলকে পরিচ্ছন্ন রাখার আর্জি জানাবে। এই বিদ্যালয় নির্মল বাহিনী স্যানিটেশন ক্লাবের সদস্যবৃন্দ হবে চাইল্ড ক্যাবিনেটের প্রধানমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য ১০ জন ছাত্র-ছাত্রীসহ একজন সহশিক্ষক। তারা পরামর্শদাতার কাজ করে ফি মঙ্গলবারে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এই কাজে পুরুলিয়ার লোক শিল্পকে নামানো হচ্ছে। ছৌ, ঝুমুর, পুতুল নাচ, মানব পুতুল নাটক, পথনাটক। নানাবিধ স্থানীয় ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকেও জেলা প্রশাসন কাজে লাগাবে মডেল গ্রাম গড়ার লক্ষ্যে। অতীতে এই জেলা শৌচাগার স্থাপনে একেবারে শেষের দিকে ছিল। বাম আমলের সেই করুণ ছবি কাটিয়ে পুরুলিয়ার অবস্থান এখন অনেকটাই উজ্জ্বল। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই এই কাজে গতি পেয়েছে পুরুলিয়া। ২০১৪ সালের নিরিখে এখনও পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি শৌচাগার স্থাপন হয়েছে জেলায়। এখনও যাদের বাড়িতে শৌচাগার নেই সম্প্রতি সেই তালিকা তৈরি করেছিল জেলা পরিষদ। বর্তমানে ৫ হাজার ২০৮ টি পরিবারে শৌচাগার নেই। শৌচাগার স্থাপনেও স্পেশাল ড্রাইভ চলছে জেলা পরিষদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.