সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শহর পুরুলিয়ার সোনার দোকানের ডাকাতির ঘটনায় ১০ দিনের মধ্যে কিনারা করল পুলিশ। গত ২৯ আগস্ট ডাকাতির ঘটনার দিনই বেশ কিছু সূত্র পেয়েছিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। সেই সূত্র থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল এই ঘটনায় বিহার-ঝাড়খণ্ড যোগ। ঘটনার দিন থেকেই বাংলা- ঝাড়খণ্ড সীমান্তে নাকা তল্লাশি-সহ একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশের টিম। একের পর এক ইনপুট সংগ্রহ করে চলছিল তদন্ত। শুক্রবার মধ্যরাতে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের সুদামডি থেকে এই ঘটনার অন্যতম কিংপিন করণজিৎ সিং সিধুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার চাষনালার কাছে পাথরডি থানা এলাকায়। শনিবার তাকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হবে।
এই ঘটনায় সহযোগী হিসাবে কাজ করা বিকাশ কুমারকে গত ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির নয়ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বাড়ি দিল্লিতেই। সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ধৃত করণজিৎ ও বিকাশ কুমারকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধৃত করণজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে ওই ডাকাতির ঘটনায় মোট সাতজন ছিল। তার মধ্যে সে একজন। বাকি নামগুলো আমরা পেয়ে গিয়েছি। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। জেলা পুলিশের টিম বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে।” রানাঘাটের ডাকাতির সঙ্গে সরাসরি এই ঘটনার যোগ না থাকলেও দু’টি ঘটনার মাস্টারমাইন্ড একজনই। এবং সংশোধনাগারে বসেই এই অপরাধের ছক কষা হয়েছিল।
গত ২৯ আগস্ট পুরুলিয়ার নামোপাড়ার একটি নামকরা সোনার বিপণিতে ৮ কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। মোটরবাইকে আসা সাত দুষ্কৃতী প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে অপারেশন সেরে পুরুলিয়ার সীমানা পার হয়ে ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দিয়েছিল। বিহার-ঝাড়খণ্ডের এই দুষ্কৃতীদের নিখুঁত অপারেশনে ওই বিপণির সিসিটিভির ডিভিআর পর্যন্ত নিয়ে যায়। ফলে এই ঘটনার কিনারা করা খুব একটা সহজ ছিল না। যদিও শহর পুরুলিয়ার বিভিন্ন রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে পুলিশ। ঘটনার পরের দিনই ৩০ আগস্টের তদন্তে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গঠন করে। এই ঘটনার তদন্তে এসেছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি ( বাঁকুড়া রেঞ্জ ) ভরতলাল মিনাও।
ফরেনসিক টিম ওই বিপণিতে এসে নমুনা সংগ্রহ করে। ওই একই দিনে রানাঘাটেও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ফলে সেদিনই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের একটি দল রানাঘাটে টিম পাঠায়। ওই ঘটনার সঙ্গে পুরুলিয়ার ডাকাতির সরাসরি কোনও যোগ না থাকায় সেই দল আবার ফিরে আসে। একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন টিমের ইনপুট থেকে পরে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানতে পারে রানাঘাট ও পুরুলিয়া দুটি ডাকাতির ঘটনার মাস্টারমাইন্ড একজনই। তার নামও পেয়ে গিয়েছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে
গোপনীয়তা অবলম্বন করে এই ঘটনার একেবারে উৎসস্থলে পৌঁছতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
যে দুষ্কৃতী দলটি পুরুলিয়াতে অপারেশন চালায় তারা অতীতে আসানসোলে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি করে ফেরার সময় ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারিতে একজনকে গুলি করে খুন করে। এছাড়া ধানবাদেও এই দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে একটি গুলির লড়াই হয়। এই দলের সদস্যরা ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অন্তর্গত গত চার-পাঁচ মাস আগে দমদমেও সোনার দোকানে ডাকাতি করে বলে অভিযোগ। এই দুষ্কৃতী দলটি একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনা করে সবসময় অপারেশন সারে। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা এক একটি অপারেশনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকে। কেউ অপারেশন করার জন্য যানবাহন বা মোটরবাইকের খোঁজ করে। কেউ দেখে আইটি সেক্টর। এরা এমনভাবে অপরাধ সম্পন্ন করে যেকোনও প্রমাণই তারা ফেলে যায় না। পুরুলিয়ার এই সোনার দোকানে অপারেশন করার জন্য তারা শহর থেকে ৫০ কিমি দূরে ঝাড়খণ্ডের একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। সেই আশ্রয়স্থল থেকেই ২০-২৯ আগস্ট পর্যন্ত তারা রেইকি করে। তারপরই হয় অপারেশন।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.