সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের চিহ্ন যুক্ত গোলাকার প্রাচীন মুদ্রা। সেই মুদ্রা ঘরে রাখলে নাকি গৃহস্থে সর্বদা ‘লক্ষ্মী’ বিরাজ করবে। ধন-সম্পদে ভরে উঠবে ঘর। এমন লোভ দেখিয়ে সেই প্রাচীন মুদ্রা বিক্রি করতে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক মহিলা-সহ ঝাড়খণ্ডের চার মুদ্রা কারবারি। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রবিবার রাতে এই চার দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) ধৃতিমান সরকারের নেতৃত্বে বান্দোয়ান থানার পুলিশ এই সাফল্য পায়। তাঁর কথায়, “এটা একটা চক্র। এইভাবে এরা নানা কথা বলে প্রাচীন মুদ্রা বিক্রি করে। ওই মুদ্রাটি কোন সময়কার তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত চার জনের নাম মহাবীর লাকড়া, অনিল লাকড়া, রামকুমার নায়ক ও প্রভা দেবী। মহাবীর ও রামকুমারের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের রাঁচির নামকূম থানার ললীগোড়াতোলা এলাকায়। অনিল থাকে নামকূমের তুম্বাকুটুতে। প্রভা দেবীর বাড়ি নামকূমের সিদরোট, টাঙ্গরতুলিতে। এদিন ধৃত চারজনকেই পুরুলিয়া আদালতে তোলা হয়। রামকুমার ও অনিলের চারদিন পুলিশ হেফাজত হয়। বাকি দু’জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে। এই ঘটনায় একটি প্রাচীন মুদ্রা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের এই দুষ্কৃতীরা বান্দোয়ান ব্লক সদরে একটি হোটেল ভাড়া করে এই কারবারের জাল বিছাতে চেয়েছিল। গত ৬ জানুয়ারি তারা বান্দোয়ান ব্লক সদরে একটি হোটেল ভাড়া নেয়। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন জায়গায় এই প্রাচীন মুদ্রা বিক্রির চেষ্টা করে। গত ৭ জানুয়ারি বান্দোয়ানে একটি চায়ের দোকানে ওই কারবারিরা এসে এই মুদ্রার নানা গুণাবলীর কথা জানিয়ে যায়। তারপরই তা ক্রয় করতে এক যুবক আগ্রহী হন। তখনই তাঁকে তাদের ভাড়া করা হোটেলে ডেকে নেয় ওই কারবারিরা। আগ্রহী ব্যক্তিকে মুদ্রা কারবারিরা জানায়, এই মু্দ্রা ঘরে রাখলে ধন, সম্পদের কখনও অভাব হবে না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের এই মুদ্রা ভীষণই শুভ। এই মুদ্রা আতপ চাল, আলপিন এমনকী দুর্বাঘাস কার্যত চুম্বকের মতো টেনে নেয়। ওই কারবারিরা তা হাতেনাতে দেখিয়েও দেন।
শুধু তাই নয়, এই মুদ্রার বিষয়ে নানা ভিডিও দেখানো হয় ওই যুবককে। মুদ্রার এমন গুণাবলী দেখে তিনি তা ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিলে ওই কারবারিরা কুড়ি হাজার টাকা দাম বলে। ওই যুবক দশ হাজার টাকা ওই দিনই অগ্রিম হিসাবে দিয়ে দেন। রবিবার তিনি বাকি দশ হাজার টাকা দিয়ে ওই মুদ্রা নিতে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায় ওই মুদ্রা কারাবারিরা নিয়ে চলে গিয়েছে। আকাশ থেকে পড়েন যুবক। তখনই তিনি বুঝে যান তিনি প্রতারণার শিকার হন। সঙ্গে-সঙ্গে গোটা ঘটনা বান্দোয়ান থানাকে জানান। ওই দিন সন্ধেতেই পুলিশ তাদের বান্দোয়ান বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.