ছবি: প্রতীকী।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে ‘পথের কাঁটা’ হয়ে গিয়েছিলেন স্বামী। তাই প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠল স্ত্রীর বিরুদ্ধে। পুরুলিয়ার (Purulia) নিতুড়িয়া থানার মুরগাবনি এলাকার পরিত্যক্ত কয়লা খাদান থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় কামাল আনসারি নামে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। মৃতের স্ত্রী, তার প্রেমিক-সহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে নিতুড়িয়া থানার পুলিশ। শুক্রবার তাদেরকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে স্ত্রী ছাড়া বাকি তিন জনের সাতদিনের পুলিশ হেফাজত হয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
গত সোমবার সন্ধ্যায় নিতুড়িয়া থানার সড়বড়ি-মধুকুণ্ডা রাস্তার ডান পাশে জল জমে থাকা পরিত্যক্ত কয়লা খাদান থেকে উদ্ধার হয় রঘুনাথপুরের ধ-টাড়া গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ৩২ বছরের যুবক কামাল আনসারির ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মৃতদেহ। ওই যুবকের গলা, পেট-সহ শরীরের একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ওইদিন রাতেই মৃতের শ্যালক আবদুল সামদ আনসারি অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীদের বিরুদ্ধে খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নিতুড়িয়া থানার পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
এই ঘটনায় তদন্তে নেমে নিহতের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ খোঁজ পায় ওই হাসিমুদ্দিনের। তদন্তকারিদের দাবি, বিবাহিত হাসিমুদ্দিনের সঙ্গে বছর দেড়েক আগে ফেসবুকে আলাপ হয়েছিল দুই সন্তানের মা বছর ২৬-র স্ত্রী সালমার। তারপরই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তারা। উভয়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। আর এই সম্পর্কে ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বামী। তাই তাকে সরাতেই স্ত্রী সালমা তার প্রেমিক শেখ হাসিমুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী কামালকে খুনের ছক কষে। ধীরে ধীরে কামালের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে হাসিমুদ্দিন। আর সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজবুত করতেই নিহত কামালকে রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়ে নিজের খরচে পার্টি দিত সেl এভাবেই তাকে দু-দুবার খুনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় প্রেমিক হাসিমুদ্দিনl তৃতীয়বারের খুনের ষড়যন্ত্র গত একমাস আগে করেছিল স্ত্রী সালমা ও তার প্রেমিক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খুনের পরিকল্পনায়, সোমবার কামালকে পাড়া থেকে মোটরবাইকে তোলে ওই হাসিমুদ্দিন ও তার দুই বন্ধুl মোট তিনজন মিলে তাকে নিয়ে যায় আসানসোলের নিয়ামতপুর। সেখানে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতুড়িয়ার সড়বড়িতে ফিরে একটি দোকান থেকে মদ ও ছুরি কেনে হাসিমুদ্দিন। একটু রাতের দিকে সেই মুরগাবনির পরিত্যক্ত কয়লা খাদানের ঘটনাস্থলে গিয়ে কামাল ও শেখ আলিকে ছেড়ে আসে হাসিমুউদ্দিনl মদের আসর বসাতেই ওই এলাকাকে বেছে নেয় তারা। তারপর শেখ আলিমকে বাড়ি থেকে মোটরবাইকে নিয়ে আসে। শুরু হয় মদের আসর। এরপর তিনজন বন্ধু মিলে কামালকে কুপিয়ে খুন করে তার মৃতদেহ পরিত্যক্ত খাদানে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। খুনিরা ভেবেছিল, খাদানে মৃতদেহ ফেললে খোঁজ পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেই ছকে বাদ সাধে বর্ষার বৃষ্টি। খাদান জলে ভরে থাকায় মৃতদেহ ভেসে ওঠে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.