ছবি: সুনীতা সিং।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোষের (কাড়া) লড়াইয়ের আয়োজন। লড়াই চলার মাঝে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পারা থানার হাতিমারা গ্রামে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কীভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে আয়োজন করা হল এই লড়াইয়ের? উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরের পুরুলিয়ার (Purulia) পাড়া থানার এলাকার অন্তর্গত হাতিমারা গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল মোষের লড়াইয়ের। স্বাভাবিকভাবেই আশপ্রাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ তা দেখতে ভিড় জমান। সেখানেই ছিলেন রথু বাউড়ি। বয়স ৫২ বছর। নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয় লড়াই। পরাজিত মোষটি মাঠ ছেড়ে বেরনোর সময় ঘটে দুর্ঘটনা। জখম হন রথু বাউড়ি। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় কুস্তাউর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
পুরুলিয়ায় এই ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও মোষের লড়াইয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তৎকালীন সুপার রূপেশ কুমার প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল অ্যাক্ট-১৯৬০ আইনকে সামনে রেখে মহিষ লড়াই বন্ধ করে দেন। বিরোধিতায় শুরু হয় আন্দোলন। মানভূম সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির তরফে বলা হয়েছিল, “মোষের লড়াই মানভূমের সংস্কৃতি।” পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে মোষের লড়াইয়ের আয়োজন চলে আসছে। গতবছরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৫ জনকে। প্রতিবারের মতো এবছরও পুজোর পর থেকেই বিভিন্ন গ্রামে মোষ, মুরগির লড়াইয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। রবিবার হাতিমারা গ্রামে লড়াইয়েই ঘটল দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরগন জানান, “সুনির্দিষ্ট মামলা রুজু করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, মোষের লড়াইয়ের আড়ালে এই অনুষ্ঠান ঘিরে চলে জুয়া, এমন অভিযোগ বহুদিনের। দর্শকরা মদ্যপ অবস্থায় লড়াই দেখতে যান বলেও শোনা যায়। আর সেই কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে বলেই দাবি করলেন মানভূম সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির প্রধান অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তিনি বলেন, “কাড়া লড়াই মানভূমের সংস্কৃতি। তা আমরা বাঁচাব। কিন্তু এই লড়াইকে ঘিরে যেভাবে জুয়া চলছে বা যেভাবে মদ্যপ অবস্থায় দর্শকরা আসছেন, তা সমর্থন করি না।” মোষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই আয়োজকদের নিয়ম না মেনে রসিকরা (মোষের মালিক) লড়াই চলাকালীন নিজের মোষ ছেড়ে দেন। ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.