সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিষহরি-র আরাধনায় প্রধান নৈবেদ্য হাঁস। আর সেই হাঁস কিনতে পুজোর দিনেও ধুম পুরুলিয়ায়। হাঁস দিয়ে বিষহরিকে সন্তুষ্ট করতে কালঘাম ছুটছে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের। কারণ, এক একটি হাঁসের দাম উঠেছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। কিন্তু হাঁস তো কিনতেই হবে। না হলে মা মনসাকে সন্তুষ্ট করা যাবে কি করে! তাই পকেটে টান থাকলেও পুরুলিয়ার গাঁ-গঞ্জের বাজার থেকে শহরেও শুক্রবার সকালে হাঁস কিনতে ভিড় উপচে পড়ে।
প্যাক প্যাক আওয়াজে যেন হাঁসের মেলা! শুক্রবার একেবারে বিকাল পর্যন্ত জমজমাটি হাঁসের বাজার চলবে। তবে প্রতিমা বিক্রি এবার একটু কম। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মা মনসার প্রতিমার বাজারও বেশ চড়া। এক হাজার থেকে প্রায় তিন হাজার। এই বাজারও চলে এদিন দুপুর পর্যন্ত। তবে এদিন সকাল থেকেই প্রতিমা কেনাবেচা বাটা ভালই ছিল। পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, “পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর সমগ্র জঙ্গলমহলের বড় উৎসব এই মনসা পুজো। মূলত শ্রমজীবী মানুষজনের এই পরব। যারা জলে-জঙ্গলে, মাঠে-ঘাটে কাজ করেন তারা পোকামাকড়, সাপ, কীট- পতঙ্গ থেকে বাঁচতে মা-মনসার আরাধনা করে থাকেন। চাষাবাদের কাজ শেষে শ্রাবণ সংক্রান্তিতে এই পুজো হওয়ায় মানুষজন এই উৎসবকে ঘিরে খাওয়া-দাওয়াতেও মেতে ওঠেন। মা মনসার প্রধান নৈবেদ্য হাঁস বলি দেওয়ার পর চলে ভুরিভোজ।”
পুরুলিয়ায় এবার সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদের কাজ ভাল হয়নি। এখনও চাষের কাজ চলছেই। এই এলাকার মানুষ খানিকটা মনমরা। তার মধ্যেই মা মনসার আরাধনা করছেন মালভূমির মানুষজন। পুজোর পরের দিন শনিবার হাঁস মাংস খেতে শহর থেকে গ্রামের বাজার দোকানপাট সব কিছুই বন্ধ থাকবে। শনিবার অঘোষিত বনধ হবে পুরুলিয়ায়। ঘরে ঘরে গণহারে এই পুজো। সঙ্গে হাঁসের মাংস। এই মাংস খেয়ে মানুষজন অসুস্থ হয়। তাই স্বাস্থ্য দপ্তর আগেভাগে প্রস্তুতও থাকে। তবে হাঁস মাংস কৃমিনাশক। মনসার আরাধনা করা জেলার বাসিন্দা মিষ্টি মাহাতো, দেবজ্যোতি আচার্য বলেন, “এবার হাঁসের দাম ভীষণ বেশি। ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কিনতে তো হবেই। মা মনসার প্রধান নৈবদ্য যে হাঁস।” ঝালদার প্রতিমা শিল্পী নারায়ণ সূত্রধর বলেন, “কাঁচামালের জন্য প্রতিমার দাম বেড়েছে। মা মনসা একা রয়েছেন এমন মূর্তির দাম এক হাজার। বেহুলা, লখিন্দর রয়েছে এমন মূর্তি হাজার তিনেক। তবে এবার প্রতিমার বিক্রিবাটা কম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.