সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঠেকে শিখছে সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় সিপিএম নেতা-কর্মীরা তলে-তলে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় সেই ‘গদ্দার’-দের চিহ্নিত করে ১৯ জনকে পার্টি থেকে তাড়াল পুরুলিয়া জেলা সিপিএম। তবে বহিষ্কারের এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে মনে করছে দলের জেলা নেতৃত্বই। বহিষ্কৃত এই ১৯ জনের মধ্যে দলের এরিয়া কমিটির সদস্যও রয়েছেন। এই পার্টি সদস্যরা হলেন পারা, কাশীপুর, বলরামপুর ও রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকার। সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরে যেমন নির্বাচনী পর্যালোচনা চলছে তেমনই জেলায় একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত আমরা এই কাজ করছি। লোকসভা ভোটের নিরিখে প্রাথমিক পর্যালোচনার পরই দলের উনিশ জন সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই একদা সিপিএমের লাল দুর্গ পুরুলিয়ায় সিপিএমের ভোট ব্যাংকে ধস নামে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই জেলায় সিপিএমের ১৪ শতাংশ ভোট এবার ৬ শতাংশে নেমে যায়। যেখানে রাজ্যে সিপিএমের ভোট ৭ শতাংশ। আলিমুদ্দিনের হিসাব অনুযায়ী পুরুলিয়াতেই লোকসভা ভোটে সিপিএমের সবচেয়ে বেশি ভোট কমেছে। তাই দলের ভরাডুবির মধ্যেও পার্টি সদস্যদেরকে বহিষ্কার করতে পিছপা হল না পুরুলিয়া জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সালে এই জেলায় সিপিএমের পার্টি সদস্য ছিল কুড়ি হাজারের কিছু কম। বর্তমানে জোনাল ও লোকাল কমিটি এরিয়া কমিটিতে মিশে এখন এই জেলায় সিপিএমের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের নিরিখে এই জেলায় বামেদের ভোট ছিল ১লক্ষ ৮৯ হাজার। লোকসভা নির্বাচনে চার নম্বরে চলে গিয়ে ভোট কমে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬৮ হাজার।
[ আরও পড়ুন: অস্ত্র হাতে রাস্তায় ঘুরছে ‘অশরীরী’ ছেলেধরা! আতঙ্ক আলিপুরদুয়ারে ]
তাই জেলা সিপিএম মনে করছে, অন্তর্ঘাত হয়েছে। তাই বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করে তাদেরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। আরও কয়েকজনের ওপর যে শাস্তির খাড়া নামতে চলেছে তা বুঝে গিয়েছেন নিচুতলার কর্মীরাও। লোকসভা ভোটের সময় স্থানীয় সিপিএম নেতারাই কর্মীদের বলেছিলেন, তৃণমূলকে হারাতে রামে ভোট দিতে হবে। এই অলিখিত নির্দেশ ছিল জেলারও। ভোটের দিন পুরুলিয়া জু়ড়ে সিপিএমে চাউর হয়ে যায় বাম থেকে রামে যাওয়া মানে একটি পুটকির বিষয়। সেটা ঘুরিয়ে আনতে সময় লাগবে না। তাই বুথ স্তরের কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, জেলার নির্দেশ মত কাজ করে এখন তাদেরকেই ‘বলির পাঁঠা’ করা হচ্ছে।
সিপিএমের এই আদর্শচ্যুতর জন্যই পুরুলিয়ায় বামেরা কার্যত সাইনবোর্ড হতে চলেছে। সিপিএমকে নিয়ে এই জেলায় সোশাল সাইটে নানান রঙ্গ-রসিকতাও চলছে। সিপিএমের সময়কাল ১৯৭৭ থেকে শুরু করে ২০১৯-এ শেষ দেখানো হয়েছে। কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীকে দেওয়া হয়েছে মালা। কিন্তু এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ভোটের পর থেকেই জেলার ১৫ জন সম্পাদকের সদস্য দিন রাত গ্রামে–গ্রামে ঘুরে ঘুরে দলের কাজ করছেন বলে জেলা নেতৃত্ব দাবি করেছে। আগামী ৩০ জুন হুল দিবসে জেলা সিপিএম কুড়িটি ব্লকেই একাধিক কর্মসূচি নেবে। সকল স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জেলায় হুল দিবস পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। জেলা সিপিএম জানিয়েছে, তারা এবার থেকে ধারাবাহিকভাবে সামাজিক কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করে আম জনতার মন জয় করবেন। দু’বছরের মাথাতেই যে বিধানসভা ভোট!
[ আরও পড়ুন: ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে মৃত্যুমিছিল রোগীদের, চাঞ্চল্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.