পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাগর কর্মকার। নিজস্ব চিত্র।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একেবারে ঘরে ঢুকে গবাদি পশুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল চিতাবাঘ। রাতের খাবার খেয়ে এমন হাড়হিম ছবি দিন সাতেক আগে কার্যত চোখের সামনে দেখেছিল মাধ্যমিক পড়ুয়া। আর তার পর থেকে শুধুই চিন্তা জঙ্গলপথে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবে কী করে? সাইকেলে করে যাওয়া তো সম্ভব নয়। তাই সামান্য চাষাবাদ ও প্রাণীপালন করে সংসার চালানো পরিবার ভয়ার্ত ছেলেকে মোটরবাইকে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন বাবা। এই পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেই ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর যাতায়াতে ১৫ লিটার পেট্রল বরাদ্দ করল ব্লক প্রশাসন।
পুরুলিয়ার ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি গ্রামের বাসিন্দা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাগর কর্মকারের জন্য ঝালদা দুই ব্লক প্রশাসন থেকে তার যাতায়াতে গাড়ির জ্বালানি বরাদ্দ করে দেওয়া কার্যত নজিরবিহীন। কারণ এবার সরকারি আদেশনামায় রয়েছে, রাজ্যের হাতি উপদ্রুত এলাকায় কোনও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী থাকলে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করে দেবে বনদপ্তর। কিন্তু অন্যান্য বন্যপ্রাণের বিচরণের ক্ষেত্রে জঙ্গল পথে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে গাড়ি বা জ্বালানি বরাদ্দ করার কোনও বিধি নেই। এই ক্ষেত্রে ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাগর কর্মকার ব্যতিক্রম। সোমবার ইতিহাস পরীক্ষার দিন থেকে ব্লক প্রশাসনের এই সুবিধা পাচ্ছে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের বিডিও অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, ” প্রথম দু’দিন ওই পরীক্ষার্থীর ভীষণ সমস্যা হয়েছিল এটা আমরা পরে জানলাম। প্রথমে আমাদের বনদপ্তর তো কিছু জানায়নি। আমি জানতে পেরেই ওই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য ১৫ লিটার পেট্রোল বরাদ্দ করে দিয়েছি।” ঝালদা দু’নম্বর ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, দঙ্গল এলাকার পেট্রোল পাম্পে ১৫ লিটার পেট্রোলের একটি স্লিপ দেওয়া হয়েছে।
ঝালদা দু’নম্বর ব্লক প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে ভীষণ খুশি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাবা অখিল কর্মকার। তাঁর কথায়,”হাতি উপদ্রুত এলাকায় থাকা পরীক্ষার্থীরা যানবাহন পাচ্ছে। আর আমাদের সিমনি গ্রামে চিতাবাঘ হামলা করেছে কিন্তু এই গ্রামের পরীক্ষার্থীরা কোনও সুবিধা পাবে না তা কী করে হতে পারে। তাই আমি সরব হয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের সমস্যার কথা বুঝতে পেরে পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা ভীষণই খুশি।”
আসলে এই সিমনি গ্রাম থেকে ২১ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের পরীক্ষার সিট পড়েছে আদারডি হাই স্কুলে। তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয় এদিন থেকে। কিন্তু বাড়িতে চিতাবাঘ হামলা চালানো সেই পরীক্ষার্থী সাগর কর্মকারের সিট পড়েছে ১৭ কিমি দূরে ঝালদা সত্যভামা বিদ্যাপীঠে। তাই একজন পরীক্ষার্থীর জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা না করে মোটরবাইকে যাতায়াতে জ্বালানির ব্যবস্থা করে প্রশাসন।
সিমনি গ্রাম থেকে পাড়রা, জিলিংলহর, খয়রি, পাতড়াহাতু-ভৈরবডি, হনকল হয়ে টালি সেন্টার। তারপর সেখান থেকে রাজ্য সড়ক ধরে পরীক্ষাকেন্দ্র। এই ১৭ কিমির পথে পাড়রার কাছে জঙ্গল রয়েছে। পরীক্ষার্থীর বাবা অখিল কর্মকার বলেন, “গত ২৯ জানুয়ারি রাতে বাড়িতে চিতা বাঘ চলে এসেছিল। তার পর থেকে ছেলেটা আমার স্বাভাবিক হতে পারেনি। কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে। ঘুমের মধ্যেও তাই হচ্ছে। তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে। তাই আমি কোনওভাবে মোটরবাইকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” পরীক্ষার্থী সাগর জানায়, “ইতিহাস পরীক্ষা ভালো হয়েছে । আর পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার কোনও সমস্যা নেই। মোটরবাইকে যাতায়াতে পেট্রোলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে প্রশাসন। তবে মাঝেমধ্যেই একটু ভয়-ভয় লাগে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.