সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার অধ্যাপক খুনের তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসছে তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে, পাপড়ি ও তার প্রেমিক ‘খুনি’ অজয় দু’জনই নিহত অধ্যাপককে একাধিকবার ডিভোর্স দিতে বলেছিল। কিন্তু পুরুলিয়ার রবীন্দ্র পল্লির বাসিন্দা, নিস্তারিনী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের অর্থনীতির অধ্যাপক নিহত অরূপ চট্টরাজ তা মেনে নেননি। সেই কারনে স্বামীর থেকে রেহাই পেতেই প্রেমিকের সঙ্গে অরূপকে খুনে ছক কষেছিল পাপড়ি। ঘটনার পুননির্মাণের জন্য ধৃত অজয়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরায় এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত আটটার পর ঘটনার পুনর্নির্মানের জন্য ধৃত অজয়কে নিয়ে অধ্যাপক খুনের ঘটনাস্থল অর্থাৎ তাঁর বেডরুমে যান তদন্তকারীরা। তখনই জানা যায়, খুনের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য দড়ি দিয়ে অধ্যাপককে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার ছক কষেছিল ধৃতরা। কিন্তু অধ্যাপকের চিৎকারে তার মা ঘরের কাছে চলে আসায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাই যে হলুদ দড়ি নিয়ে অধ্যাপককে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার ছক কষা হয়েছিল, সেই দড়ি বেয়েই ছাদ থেকে নিচে নেমে যায় ‘খুনি’ অজয়।
পু্ননির্মাণের আগেই অজয় পুলিশকে জানায় যে, ১৭ জানুয়ারি রাত আটটা নাগাদ টিউশন পড়াচ্ছিল অধ্যাপকের স্ত্রী পাপড়ি। সেই ছাত্রী বের হওয়ার সময় সুকৌশলে ঘরে ঢুকে পড়ে অজয়। তখন টিভি দেখছিলেন অরূপের বাবা–মা। অধ্যাপকের বেড রুমের ফিউজ খুলে ‘খুনি’ লুকিয়ে পড়ে সিঁড়ি ঘরে। সেখানে বসেই মেসেজে পাপড়ির সঙ্গে কথা বলছিল অজয়। সুযোগ বুঝে কাজ সারে অভিযুক্ত। এরপর ‘অপারেশন’ সেরে দড়ি বেয়ে নামার সময় চোটও পায় সে। সেখান থেকে বেরিয়ে রাতে পুরুলিয়ার রাঁচি রোডে প্রেমিকা অর্থাৎ পাপড়ির বান্ধবীর কাছেই থাকে অজয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ‘খুনি’ হাতে গ্লাভস জড়িয়ে শ্বাসরোধ করেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু অধ্যাপক তাকে দেখে ফেলায় মাফলার পেঁচিয়ে খুন করতে বাধ্য হয় ধৃত। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “ঘটনার পুননির্মাণ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, শহর পুরুলিয়ার জেকে কলেজ থেকে গণিতে অনার্স করে অজয়। এরপর দেশের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের আধারতাল থানার নিউ রামনগরের আমখেরায় চলে যায়। ফলে কলেজে পড়ার সময় পাপড়ির সঙ্গে প্রেম হলেও সেই সম্পর্কে তাল কাটে। সেখানেই এমসিএ করে জব্বলপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষকের কাজ শুরু করে সে। এরপর ফেসবুকে পাপড়িকে খুঁজে পায় সে। এরপরই পুরনো প্রেমিকাকে ফের ফিরে পেতেই এই ঘটনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.