Advertisement
Advertisement
Digital Arrest Scam

বর্ধমানের সাধুবাবাকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’! কিছু না পেয়ে আশীর্বাদ নিয়ে গায়েব প্রতারক

সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে হতভম্ব সাধু।

Purba Burdwan's monk allegedly faces digital arrest scam
Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 8, 2025 10:15 pm
  • Updated:January 8, 2025 10:45 pm  

অর্ক দে, বর্ধমান: এবার সাইবার প্রতারকদের ফাঁদে পড়লেন সাধুবাবা। দুঘন্টার বেশি সময় ধরে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করেও রাখা হয় তাঁকে। তবে মিলল না কানাকড়ি। শেষমেশ সাধুবাবার কাছে আশীর্বাদ চেয়ে মুক্তি চাইলেন প্রতারকরাই।

বর্ধমানের পালিতপুর এলাকায় রয়েছে তিব্বতী বাবার আশ্রম। সেই আশ্রমে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন এক সাধুবাবা। তাঁর আসল নাম অশোক চক্রবর্তী। তাঁকে এলাকার মানুষ সাধুবাবা বলেই ডাকেন। আশ্রমের চৌহদ্দির মধ্যেই অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন। তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে এলে “ওম নমঃ শিবায়” বলে সম্বোধন করে কথা শুরু করেন। কেউ ফোন করলেও তিনি একইভাবে সম্বোধন করেন। চেনা পরিচিত মানুষের সাহায্যেই আশ্রম পরিচালনা ও নিজের দিনযাপন করেন তিনি। আশ্রমের চারপাশ জুড়ে কিছু জমি রয়েছে। এছাড়া, ব্যক্তিগতভাবে তাঁর আর কিছু নেই। এই সর্বস্যত্যাগী সাধুবাবাই শেষে কিনা প্রতারকদের ফাঁদে পড়লেন।

Advertisement

সাধুবাবা জানান, কয়েকদিন আগে একটি অচেনা নম্বর থেকে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে তাঁকে জানানো হয় তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলির নিষ্পত্তি না হলে তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করা হবে। এমনকি তাঁর মোবাইল নম্বর ও সমস্ত অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হবে। তাঁকে দুঘন্টার জন্য ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এই সময়টা তাঁকে ভিডিও কলে থাকতে হবে বলে সাধুবাবাকে জানান ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। আশ্রমিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত সাধুবাবার ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ তো দূর। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ভিডিও কল কোনও কিছুর সঙ্গেই সেভাবে সম্পর্ক নেই। কাজেই সম্পত্তি হারানো বা গ্রেপ্তারির কথা শুনে সাধুবাবা বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি।

কিন্তু ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে তিনি কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি সাধুবাবাকে জানায়, সে মহারাষ্ট্রের তিলকনগর থানা থেকে ফোন করেছে। এরপরই তাঁকে ভিডিও কল করা হয়। ভিডিও কল রিসিভ করতেই ফোনের স্ক্রিনে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তির ছবি ভেসে ওঠে। তাঁকে দেখেই সাধুবাবা জিজ্ঞাসা করেন,”তুমি কে বাবা?” ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি তাঁর কাছে জানতে চান, “আপনার কতগুলি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে জানান। যাবতীয় সম্পত্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যও চাওয়া হয়।”

সাধুবাবা জানান, তাঁর কিছুই নেই। এরপরই তাঁকে ঘরের চারপাশ ঘুরিয়ে দেখাতে বলা হয়। তিনি দেখান। তাতেই ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রতারকের কাছে সমস্ত বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সাধুবাবার কাছে কিছু পাওয়া যাবে না, তা বুঝে যায় প্রতারক। ফোন রাখার তোড়জোড় শুরু করে অভিযুক্ত। কিন্তু, সাধুবাবা আর পাঁচজনকে যেভাবে আশীর্বাদ করেন সেই ভঙ্গিতেই ফোনের অপরের ব্যক্তিকে আশীর্বাদ করেন। বলেন,” ঠিক আছে বাবা! তোমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।”

সাইবার প্রতারকদের নয়া চাল এই ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’। সাইবার প্রতারকদের অপরাধের এই ফন্দি কীভাবে পরিচালনা করা হয় তা নিয়ে উদ্বেগে পুলিশ। প্রতারকরা নিজেদের শিকার ধরতে কী ধরনের তথ্য জোগাড় করছে? কীভাবে প্রতারকরা নিজেদের টার্গেট বেছে নিচ্ছে? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান,”সাইবার প্রতারণা নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ নিয়মিত কাজ করে চলেছে। এই সংক্রান্ত কোনও ফোন কল বা প্রলোভনের ফাঁদে সাধারণ মানুষ যাতে পা না দেয় সেই বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও কোনও ঘটনা ঘটলে জেলাপুলিশের কাছে দ্রুত জানানোর জন্য বলা হয়েছে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement