Advertisement
Advertisement
শিকলবন্দি

মানসিক অসুস্থ মেয়ে, দু’বছর ধরে কিশোরীর পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছে বাবা-মা

বন্দি থাকায় স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছে ওই কিশোরী।

Purba Burdwan: Parents Chained 12 year-old teen girl for mental disorder
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:February 4, 2020 6:28 pm
  • Updated:February 4, 2020 8:19 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: এমনিতেই দেখে বোঝার উপায় নেই। মুখে হাসি লেগেই রয়েছে। কথাবার্তাও স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝেমধ্যেই মাথায় খেয়াল চাপলে বাচ্চাদের আদর করতে করতে কামড়ে খামচে দেয় বছর বারোর মেয়েটি। তার কারণে পাড়ার লোকজন ভয়ে ভয়ে থাকেন যাতে তাদের বাড়ির শিশুদের বিপদ না ঘটে। পুর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার কেঁওগুড়ি গ্রামে বারো বছরের মেয়ের মানসিক অসুস্থতার কারণে তার পায়ে প্রায় দুবছর ধরে লোহার শিকল পড়িয়ে রেখেছেন বাবা-মা। প্রাথমিক স্কুলে পড়ছিল কেঁওগুড়ি গ্রামের মাম্পি খাতুন নামে ওই মেয়েটি। কিন্তু এখন বন্দি করে রাখায় সে হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক জীবন।

কেঁওগুড়ি গ্রামের হাটপাড়ার বাসিন্দা মিরাজ শেখ ও সাবিনা বিবির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের মধ্যে বড় মাম্পি খাতুন। মিরাজ জনমজুরের কাজ করেন। স্ত্রী গৃহবধূ। শীর্ণকায় চেহারার মাম্পির অধিকাংশ সময় কাটে বাড়িতেই। কারণ দুপায়ে তার মোটা লোগাল শিকল জড়িয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারই মধ্যে মাম্পি জোড়া পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাইরে দরজার কাছে একদুবার এসে দাড়ায়। পাড়ার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে। সমবয়সী বা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দেখলে তাদের সঙ্গে ভাব জমাতে চায়। কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশীরা মাম্পির কাছ থেকে শতহাত দুরে সরিয়ে নেন তাদের সন্তানদের। কেন?

Advertisement

[আরও পড়ুন: একই মঞ্চে কলমা ও মন্ত্রপাঠ, সম্প্রীতির গণবিবাহ মালদহের চাঁচোলে]

মাম্পির মা সাবিনা বিবির কথায়, ” পাঁচবছর বয়স থেকেই আমার মেয়েটা মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করত। তাতেও স্কুলে পাঠাতাম। বাইরে যেত। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমার মেয়ে পাড়ার বাচ্চাদের কামড়ে খামচে দিতে শুরু করে। মারতে যায়। এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পাড়ার লোকজন আমাদের বাড়িতে এসে চাপ সৃষ্টি করে বলে, হয় তোমরা ওকে পাগলা গারদে পাঠাও না হলে পায়ে বেড়ি পড়িয়ে রাখো।” সাবিনা বিবি বলেন, ” বাড়িতে আমার ছোট ছেলেটাকেও একটি গলা টিপে মারতে গিয়েছিল মাম্পি। আমি নিজের মা তাই সহ্য করেছি। কিন্তু লোকে কেন করবে? তাই শিকল বেঁধে রেখে দিয়েছি।”

বাবা মিরাজ শেখ বলেন, ”আমার মেয়েকে একাধিক চিকিৎসককে দেখানো হয়েছিল। ওষুধ খেয়ে কিছুদিন সুস্থ ছিল। কিন্তু মাসে প্রায় দু-আড়াই হাজার টাকার ওষুধ লাগে। কিছুদিন ধারদেনা করে কিনেছি। এখন পারি না। তাই ওষুধ বন্ধ আছে।” মিরাজ বলেন, ”আমার মেয়ে শুধু অন্যদের মারধর করাই নয়, বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেছিল কয়েকবার। তাই আমরা শিকল পড়িয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছি।” কেঁওগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবীর কুমার মণ্ডল বলেন, ” মাম্পি আমাদের স্কুলে পড়ত। মাঝে এমন ঘটনা ঘটেছে জানতাম না। তবে আমাদের স্কুলে ভরতি করে দিলে আমরা লক্ষ্য রাখব। আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে মিশলে আশা করি মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠবে।”

তুমি কেন এমন দুষ্টুমি করো? এমন প্রশ্ন করা হয় মাম্পিকে। তার জবাবে লাজুক মুখে হেসে দেয় মেয়েটি। তবে বলে, ” আমার পা বেঁধে রাখায় খুব কষ্ট হয়। আমি পড়তে চাই, খেলতে চাই।”

ছবি: জয়ন্ত দাস

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement