সৌরভ মাজি, বর্ধমান: অপুষ্টির মূল কারণ সুসংহত খাবার না খাওয়া। তার জন্য বাজার থেকে দামি খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্যও অনেকের থাকে না। তাই বাড়িতেই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মাধ্যমে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন এমনই উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে সাফল্যও মিলছে বলে জানা গিয়েছে। অপুষ্টি দূরীকরণে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে সংযুক্ত করে বছরভর পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এরফলে পরিবারের শিশুরা স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারছে নিয়মিত। এমনকী পরিবারের বয়স্ক সদস্যরাও এর সুফল পাচ্ছেন।
শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। পাশাপাশি, প্রসূতিরাও খাবার পেয়ে থাকেন। তা সত্ত্বেও অনেক শিশুরই অপুষ্টি দেখা দেয়। প্রতিমাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় শিশুদের বয়সের তুলনায় ওজন অনেক কম দেখা দেয়। পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মধ্যেও অপুষ্টির লক্ষণ দেখা দেয় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারায়। সেই সমস্যা মেটাতে এবার হাতিয়ার হয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প। এই প্রকল্পের জেলার আধিকারিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য জানান, ১০০ দিনের কাজে মুরগির পোল্ট্রি ঘর, হাঁস-পাখি পালনের ঘর গড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মাধ্যমে পরিবারগুলিকে হাঁস-মুরগির বাচ্চা প্রদান করা হচ্ছে।
[তদন্তে গিয়ে বনকর্মীর হাতে নিগৃহীত জেলাশাসক, আলিপুরদুয়ারে চাঞ্চল্য]
আবার মৎস্য দপ্তরের সঙ্গে ১০০ দিনের প্রকল্পের সংযুক্তি করে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাছ চাষের ক্ষেত্র গড়ে দেওয়া হচ্ছে ১০০ দিনের কাজে। আর মৎস্য দপ্তরে শিঙি, মাগুরের মতো পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মাছের চারা দিয়ে চাষের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। উদ্যানপালন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে ফলের বাগান গড়া বা বাড়িতে ফলের গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে বাড়িতে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন পরিবারের সদস্যরা। আবার শিঙি-মাগুরের মতো মাছও অপুষ্টি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বাড়িতে বা বাগানে ফলের গাছ থাকলে তা বাড়ির লোকজন খেয় পুষ্ট হওয়ার সুযোগ পাবে।
[কৈলাস থেকে এসেছে সর্পদেবতা! মাটির হাঁড়িতে গোখরোকে পুজো দম্পতির]
এই সংযুক্তিকরণ প্রকল্পে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে পোল্ট্রি ঘর, মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আবার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীকেও তা করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কোনও গ্রামের একটা বড় অংশ উপকৃত হচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, যে পরিবারের শিশুরা অপুষ্ট রয়েছে সেইসব পরিবারকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। ভাতারের বনপাসের মিস্ত্রি পাড়ার সুখি মাঝিকে পোল্ট্রি শেড করে দেওয়া হয়েছে। মুরগি পালন করে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছেন সুখির পরিবার। একইভাবে গলসি-২ ব্লকেও হাঁস-মুরগির পোল্ট্রি ঘর গড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ব্লকেও একইভাবে অপুষ্টি দূরীকরণে ১০০ দিনের প্রকল্প হাতিয়ার হয়েছে প্রশাসনের। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “বিশেষ করে শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে ১০০ দিনের প্রকল্পের সঙ্গে অন্যান্য প্রকল্পের সংযুক্তি করে সাফল্য এসেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.