সৌরভ মাজি, বর্ধমান: এনআরএস হাসপাতালের সেই ঘটনা রেশ এখনও কাটেনি। ছোট্ট ছোট্ট কুকুর ছানাগুলোকে পিটিয়ে মারার সেই ঘটনায় সংবেদনশীল যে কোনও মানুষই শিউড়ে উঠেছিলেন। এবার তেমনই ঘটনার সাক্ষী রইল বর্ধমান। একমাস বয়সী একটি কুকুরছানাকে ধাতব লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পশুপ্রেমী মানুষজন। পুলিশেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বর্ধমানেরই পশুপ্রেমী একটি সংগঠনের তরফে। শুক্রবার বর্ধমানের ফাগুপুরে পশু হাসপাতালে মৃত কুকুরছানার ময়নাতদন্ত হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এদিন রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস নামে ওই সংগঠনের সম্পাদক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশও তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। তাঁরা আশাবাদী দ্রুত অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হবে। ইতিমধ্যেই ফেসবুক লাইভ করে ওই সংগঠনের সদস্য ও পশুপ্রেমীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। অভিজিৎবাবু, পায়েল মল্লিক, অর্জুন পালরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন, শহরের বড়নীলপুর শান্তিপাড়ায় এলাকায় ওই কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। ওই পাড়ারই বাসিন্দা জীবন সরকার ও তাঁর ছেলে প্রদীপ সরকার ওই কুকুরছানাকে হত্যা করেছে। সংগঠনের সদস্যদের কয়েকজন ওই পাড়াতেও থাকেন। তাঁরা ওই কুকুরছানাটিকে খেতে দিতেন। বৃহস্পতিবার সকালে খাবার দিতে দিয়ে দেখেন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তাকে কোলে তুলে নেন মহিলা সদস্য। কিছু পরে তাঁর কোলেই মৃত্যু হয় কুকরছানাটির।
[মিথ্যে সাক্ষ্য আদালতে, অভিযোগকারীর জরিমানার নির্দেশ বিচারকের]
পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা জানান, যাঁরা মেরেছে ওই কুকুরছানাটিকে তাঁদের দাবি নাকি কুকুরছানাটির চিৎকারে সারারাত ঘুম হয়নি। তাই মেরেছেন। সদস্যদের প্রশ্ন, ওইটুকু একটা কুকরছানা কত জোরে চিৎকার করতে পারে যে তার জন্য বন্ধ ঘরেও ঘুমোতে পারেননি ওই বৃদ্ধ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। আর রাতে ঘুমোতে পারেননি বলে পিটিয়ে মেরে ফেলার মত মানসিকতা ও নৃশংসতাও কীভাবে ওই বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের মধ্যে এসেছে তাও ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। দোষীদের শাস্তির দাবিও তুলেছেন তাঁরা। এনআরএস-এ কুকুরছানা পিটিয়ে মারার ঘটনার পরও প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন বর্ধমানের পশুপ্রেমীরা। ঘটনার প্রতিবাদে শহরের বুকে সম্ভবত রাজ্যের মধ্যে প্রথম মোমবাতি মিছিল করেছিলেন তাঁরা। রাজ্যজুড়েও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল সেই সময়। অভিযুক্ত নার্সিং পড়ুয়াদের গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ।
কিন্তু অবলা জীবদের প্রতি নৃশংসতা কমেনি। রাজ্যের আরও কয়েকটি জায়গায় তারপরও ঘটেছে কুকুর পিটিয়ে মারা বা বিষ খাইয়ে মারার ঘটনা। পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনাতেও কুকুরছানাকে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। তবে সেখানে সংগঠিতভাবে কেউ প্রতিবাদ জানাতে পারেননি। পশুপ্রেমীদের কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও থানায় অভিযোগ জানানোর পর্যায়ে যেতে পারেননি। কিন্তু বর্ধমানের পশুপ্রেমীরা অভিযুক্তদের শাস্তি চেয়ে আইনের সাহায্যে নিয়েছেন। অভিযুক্তদের সঙ্গে এদিন যোগাযোগের চেষ্টা হলেও পাওয়া যায়নি। সংগঠনের সদস্যদের কথায়, “আমরা যারা মানুষ হয়ে জন্মেছি তাঁরা অন্তত মনুষত্বটা রক্ষা করি। অবলা পিটিয়ে খুন করে নিজেদের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলে নিজেদের যেন পশুর পর্যায়ে না নামাই।”
[মৃত্যুতেও একসঙ্গে, দগ্ধ দোকান থেকে উদ্ধার চার বন্ধুর মাথার খুলি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.