পলাশ পাত্র, তেহট্ট: মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়েই দুঃসংবাদটা পৌঁছেছিল বাড়িতে৷ দেশরক্ষার কাজে গিয়ে জঙ্গিদের হাতে শহিদ হয়েছেন কাকা৷ মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল বছর ষোলর কিশোরী৷ ভেবেছিল, পরীক্ষাই আর দেওয়া হবে না৷ তবু মনের জোরে সেই শোকাচ্ছন্ন অবস্থাতেই পৌঁছেছিল পরীক্ষার হলে৷ পুলওয়ামা হামলায় শহিদ নদিয়ার জওয়ান সেই সুদীপ বিশ্বাসের ভাইঝি মাধ্যমিকে তাক লাগানো ফলাফল করল৷ প্রাপ্ত মোট ৬৫১-র মধ্যে ইতিহাসেই সে ৯০ পেয়েছে৷ বাকি সব বিষয়েই নম্বর ৯০এর উপরে৷ এমন ভাল ফলাফল সে উৎসর্গ করেছে শহিদ কাকাকে৷
পুলওয়ামা হামলায় নিহত সুদীপ বিশ্বাসের ভাইঝি মৌমিতা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তেহট্ট মহকুমায় মেয়েদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী হল৷ মঙ্গলবার মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হতেই দেখা যায় মৌমিতা ৬৫১ নম্বর পেয়েছেন। প্রসঙ্গত, ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় শহিদ হন সুদীপ বিশ্বাস। ছোট্টবেলা থেকেই কাকা সুদীপের কাছে থাকত মৌমিতা। বাবা ভিন রাজ্যে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন, মা প্রার্থনা বিশ্বাসই মেয়েকে বড় করেছেন৷ ১৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইতিহাস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মৌমিতা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। সেই ইতিহাসেই সে ৯০ পেয়েছেন।
স্কুলে বরাবর পড়শোনায় ভাল বলে খ্যাতি রয়েছে মৌমিতার। মাধ্যমিকের ফলাফলও তার ব্যতিক্রম হল না৷ বাংলা-৯৫, ইংরেজি-৯৪, অঙ্ক-১০০, ভৌতবিজ্ঞান-৮৪, জীবনবিজ্ঞান-৯৪, ভূগোল-৯২। তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়ার বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রী রেজাল্ট হাতে নেওয়ার পর চোখের জল আর বাঁধ মানল না। মৌমিতা বারবার বলছিল, কাকা সুদীপ কীভাবে ওর সঙ্গে মিশত। তার কথায়, ‘কাকার মৃত্যুর খবরের বিষয়টি ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে আমাদের অন্যরকম করে রেখেছিল। পরেরদিন মৃত্যুর খবর আসার ইতিহাস পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবতে পারছিলাম না। আগে যা পড়া ছিল সেই নিয়েই পরীক্ষা দিয়েছি। পরের পরীক্ষাগুলোতেও মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। তাও পরীক্ষা দিয়েছি।’ মা প্রার্থনা বিশ্বাস বলেন, ‘ওর কাকা ওকে খুব ভালবাসত। ও পড়াশোনায় ভাল হওয়ায় ওকে বারবার পড়ায় মন দিতে বলত৷ তবে ওর নম্বর আরও বেশি হবে বলে আশা করেছিলাম।’ মাধ্যমিক পরীক্ষার এত ভাল ফল করেই দেশের জন্য শহিদ হওয়া কাকার কথা রেখেছে মৌমিতা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.