ছেলের ছবি হাতে পুলওয়ামা হামলায় শহিদ বাবলু সাঁতরার মা বনমালা সাঁতরা।
মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ছয় বছর আগে পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় শহিদ হন হাওড়ার বাউরিয়ার বাসিন্দা বাবলু সাঁতারা। এবার পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বাবলুর মা বনমালা সাঁতরাও। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, অবিলম্বে কেন্দ্র সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর আরও জোর দেওয়া উচিত। এই নিরাপত্তার ফাঁক ফোকরের জন্যই বোমা বিস্ফোরণে তাঁর ছেলে বাবলুকে জঙ্গিদের হাতে খুন হতে হয়েছিল। এখানেও জেহাদিরা যেভাবে নিরীহ ২৬ জনকে নির্বিচারে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে, তা দেখে আঁতকে উঠেছেন বৃদ্ধা। পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার অবন্তিপোরায় সিআরপিএফের কনভয়ের আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা হয়। ৪০ জন শহিদ হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৪১ জন। সেই ঘটনা প্রাণ কাড়েবাউরিয়ার চককশি এলাকার বাসিন্দা বাবলুরও। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে ছ-ছটা বছর। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাবলুকে হারিয়ে বুকে পাথর চেপে দিন কাটাচ্ছেন মা বনমালা। কথা বলতে বলতে তাঁর গলা যেন ভারী হয়ে আসে। কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখের জল মোছেন। মাঝেমধ্যেই ছেলের ছবি মোছেন তিনি। পুরনো নানা কথা মনে করেন। ছ বছর কাটলেও ছেলের স্মৃতি আজও তাঁর কাছে সমান উজ্জ্বল।
পহেলগাঁও হামলার কথা বলতে গিয়ে বনমালাদেবী বলেন, “টিভিতে খবরটা দেখেই আঁতকে উঠেছিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আবার সেই জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা বারবার ভারতের ক্ষতি করে দিচ্ছে। সরকার তাদের শাস্তি দিক।” পুলওয়ামা হামলা আর এই ঘটনাতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক। তবে তো পর্যটকরা সেই জায়গায় পৌঁছাবে। এলাকা নিরাপদ করবে না অথচ পর্যটকদের যেতে দেবে। তাতেই তো ক্ষতি হয়ে যায়। এমন অবস্থা যেন আর না হয়।” এদিকে, স্থানীয় কাউন্সিলর অশিরঞ্জন অধিকারী বলেছেন, “আমরা বাবলু সাতঁরার পরিবারের পাশে রয়েছি। সব সময় থাকবো।”
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবরই আকর্ষণ করে পর্যটকদের। বিশেষত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উপত্যকায় ভরা পর্যটনের মরসুম হিসাবে ধরা হয়। তাই সেখানে হাজার হাজার পর্যটক ভিড়ও জমিয়েছেন। এই আবহে গত ২২ এপ্রিল, পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে জঙ্গি হামলা হয়। প্রাণ হারান ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে একজন কাশ্মীরি। বাকিরা পর্যটক। নিরীহ মানুষের প্রাণহানিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন সকলে। প্রতিবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বদলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত। বাতিল করা হয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি ও বাণিজ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.