সোম রায়: সেই নৃশংস ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার লেথাপোরা গ্রামের কাছে সিআরপিএফ জওয়ানদের গাড়িতে হওয়া বিস্ফোরণে কেঁপে গিয়েছিল গোটা দেশ। শূন্য হয়েছিল অনেক পরিবার। কেউ হারিয়েছিলেন স্বামী। কেউ বাবা। কেউ বা ছেলেকে। কালের নিয়মে অনেকের স্মৃতিই ফিকে হয়েছে। বেশিরভাগই মেতে উঠেছেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কী অবস্থায় দিন কাটছে সেই নিরীহ পরিবারগুলির? খোঁজ নিতেই যোগাযোগ করা বাংলার দুই প্রান্তে। উলুবেড়িয়া হোক বা তেহট্ট। দু’জায়গাতেই একই ছবি। শুরুর দিনগুলিতে তৎপরতা থাকলেও সময়ের নিয়মে তাতে এসেছে ভাঁটা। বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। যাদেরই অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত ছিলেন দুই শহিদ সিআরপিএফ জওয়ান বাবলু সাঁতরা ও সুদীপ বিশ্বাস।
বাবার মৃতদেহে ভাবলেশহীনভাবে মালা দিচ্ছে সাত বছরের মেয়ে পিয়াল। আসলে সে বুঝতেই পারেনি কত বড় একটা জিনিস হারিয়ে ফেলল সে। এখনও তার দিন কাটে সেভাবেই। মাঝেমধ্যেই মা মিতার কাছে জানতে চায়, “বাবা কোথায়?” আড়ালে গিয়ে চোখ মোছা ছাড়া কোনও উত্তর দিতে পারেন না মিতা। তাই কথা বলতে হল বাবলুর ভাই কল্যাণ সাঁতরার সঙ্গে। বললেন, “কোনও কিছুতেই যে আমাদের পরিবারের অভাবপূরণ করা সম্ভব নয়। তবু বউদি আর বাচ্চাটার ভবিষ্যতের জন্য চেষ্টা করছি সরকারি ক্ষতিপূরণগুলো পাওয়ার। রাজ্য সরকারের টাকা পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের কোনও খবর নেই।”
একই উত্তর পাওয়া গেল কৃষ্ণনগর থেকেও। সুদীপ বিশ্বাসের বউদি সুলেখা বলছিলেন, “শুধু টাকাই নয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ননদ (সুদীপের বোন) ঝুম্পার চাকরির জন্য কাগজপত্রও নিয়ে গিয়েছে। সুদীপের বিয়ে হয়নি। তাই শ্বশুরমশাই অনুরোধ করেছিলেন আমার ছেলে সঞ্জু যেহেতু ওর মুখাগ্নি করেছে, তাই ওকে কেন্দ্র সরকারের চাকরি দিতে। কিন্তু ওরা বলে দিয়েছে তা সম্ভব নয়।” কিন্তু কেন এখনও মেলেনি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষতিপূরণ? কল্যাণ সাঁতরা ও সুলেখা বিশ্বাস দু’জনই বলছিলেন, “যেহেতু লোকসভা ভোট। তাই হয়তো সব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।” যে ভোটের জন্য ‘ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে’ সব, সেই ভোটে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবশ্য পিছিয়ে থাকছে না শহিদ পরিবার। নিয়ম মেনে তাঁরা যাবেন সাংবিধানিক কর্তব্য পালন করতে। সরকার গঠনে মত দেবেন নিজেদের। এই প্রসঙ্গেই সামনে এল এক অপ্রিয় প্রশ্ন। পুলওয়ামা কাণ্ড সম্পর্কে বিরোধীরা মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন তোলেন যে, এর পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তও থাকতে পারে। এই প্রসঙ্গে ভিন্ন সুর দুই পরিবারে। কল্যাণ বললেন, “আমার মনে হয় না নিজেদের স্বার্থে কেউ এতটা নিচে নামতে পারে।” সেখানে সুলেখার বক্তব্য, “বাড়ির কেউ সঙ্গে না থাকলে বাইরের কেউ জানতে পারে না আমার ঘর কখন ফাঁকা থাকবে। কোথায় কী আছে? যেভাবে সব হয়েছে, তাতে এই প্রশ্নগুলো মনে তো আসেই।”
তবে দুই পরিবারই অবশ্য সার্জিকাল স্ট্রাইকে প্রলেপ দিচ্ছে নিজেদের মনের ক্ষতে। ঘটনার সতেরো দিনের মাথায় খুলে গিয়েছিল লেথাপোরার সেই অভিশপ্ত রাজপথ। স্বাভাবিক নিয়মে যাতায়াত শুরু করেছিল গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু এখনও চেনা ছন্দে জীবনের পথে ফিরতে পারেনি দুই শহিদ পরিবার। তা অবশ্য কোনওদিনই সম্ভব নয়। তবু যে সাহায্যগুলি প্রাপ্য ছিল সাঁতরা ও বিশ্বাস পরিবারের, তার সব মেলেনি এখনও। কবে মিলবে নেই কোনও উত্তর। তবু দিনগোনা…
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.