সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাতে জাতীয় পতাকা এবং ভেজা চোখে অপরিসীম ক্রোধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। পুলওয়ামায় বাংলার দুই শহিদের দেহ শেষবারের মতো দেখতে শনিবার সকাল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে ছিল জনতার ঢল। বিকেল চারটের কিছু পরে দুজনের দেহ পৌঁছায় দমদম বিমানবন্দরে। বায়ুসেনার বিমান বিভ্রাটের জন্য বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে দেহ পৌঁছয় দুই জওয়ানের। সেখানে বায়ুসেনা এবং নৌ বাহিনীর আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। ছিল সিআরপিএফ বাহিনীও। গান স্যালুটে দুই বাঙালি জওয়ানকে শেষশ্রদ্ধা জানানো হয়। শহিদদের কফিন কাঁধে বইলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সেখান থেকে দেহ পৌঁছায় নদিয়ার পলাশিপাড়া এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাড়িতে।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় শহিদ হওয়া পাড়ার ছেলের দেহ আসবে শুনে, সকাল থেকে হাতে বাড়ির টবে ফোটা ফুল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন রাজ্যের দু’ প্রান্তে দুই গ্রামের অনেকে। দুপুরের পর সেই দেহ এসে যখন পৌঁছল তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামের আমজনতা। চোখের জলে শহিদ সুদীপ বিশ্বাস এবং বাবলু সাঁতরাকে শেষ বিদায় জানালেন হাওড়া ও নদিয়ার হাজার হাজার মানুষ। পুলওয়ামায় বিস্ফোরণে শহিদদের জন্য চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি দেশ। বাংলার দুই জওয়ানের দেহ কফিন বন্দি হয়ে ফিরতেই নদিয়া ও হাওড়ায় তাঁদের বাড়িতে গ্রামের পর গ্রামের মানুষ ভিড় করেছিলেন। সকলের চোখে জল, শোকাকুল কণ্ঠস্বর। মুখে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান। শহিদের দেহ এসে পৌঁছতেই শোকের পাশাপাশি ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটছে একের পর এক গ্রামে।
উলুবেড়িয়ার চককাশি রাজবংশী পাড়ার বাবলু সাঁতরা সিআরপিএফ-এর ৩৫ নম্বর ব্যাটালিয়নে ছিলেন। পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়ার সুদীপ বিশ্বাস ছিলেন কেওএস সেক্টরে জিডি র্যাঙ্কে। এবার কফিন বন্দি হয়ে দু’জনে ফিরেছেন নিজেদের গ্রামে। সকাল থেকে কাঁদছিলেন নিহত সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস। নদিয়ার পলাশিপাড়া থেকে প্রথমবার পোস্টিং নিয়ে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। ভেঙে গেল সংসার। বাড়িতে শুধু হাহাকার ও বুক চাপড়ানো কান্না। একই ছবি হাওড়ার বাউড়িয়ায়। ৩৯ বছরের বাবলু আর নেই। কাশ্মীরের চাকরি আর ভাল লাগছিল না। আগামী বছরই অবসর নিয়ে বাংলায় স্থায়ীভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। সব স্বপ্ন ভেঙে গেল। বৃহস্পতিবার কনভয়ের গাড়ি ছাড়ার আগে দু’জনেই শেষবারের মতো বাড়িতে ফোন করেছিলেন।
ফাঁসই যেন রুটিন! মাধ্যমিকের চতুর্থ দিনে ভূগোল প্রশ্নও হোয়াটসঅ্যাপে
কাশ্মীরের পুলওয়ামা এভাবেই মিলিয়ে দিল হাওড়ার বাউড়িয়া চককাশি ও নদিয়ার পলাশিপাড়া হাঁসপুকুরিয়াকে। নিদারুণ সন্ধিক্ষণ। দুই পরিবারের কান্নার সঙ্গী এখন গোটা বাংলা, গোটা দেশ। গোটা দেশে মোমবাতি মিছিল হয়েছে। সারা রাজ্যেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন মানুষ। সকাল থেকে পলাশিপাড়াতে সুদীপের ছবি ঢেকেছে মালায়। বাউড়িয়াতেও বাবলু সাঁতরার ছবিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য। দুই পরিবারের মানুষই চাইছেন বদলা। দুই শহিদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানায় রাজ্য পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.