দিব্যেন্দু মজুমদার: গত পুজোয় বাবাকে হারিয়ে অপরাধ জগতের অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছিল সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় ওরফে বাপ্পা। কিন্তু ব্যান্ডেল জিআরপির আধিকারিক ও কর্মীদের ভালবাসা আর সহযোগিতায় সেই বাপ্পাই পুজোর আগে আবার সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এল। এখন এই বাপ্পাই জিআরপি অফিসে সকলের নয়নের মণি। অফিসের কোনও কর্মীর মনখারাপ হলেই বাপ্পার কণ্ঠে পুরনো দিনের গান শুনে তারা মনের সমস্ত দুঃখ-যন্ত্রনা ভুলে আনন্দে মেতে উঠছেন। জিআরপির পক্ষ থেকেও বাপ্পাকে একটা সুন্দর সুস্থ জীবন দেওয়ার চেষ্টা চালান হচ্ছে। বাপ্পা নিজেও এখন তার পুরোনো জীবন ভুলে যেতে চাইছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
[পুজোয় সন্তানদের সঙ্গ চেয়ে আদালতে বাবা]
বাপ্পার মা জ্যোৎস্নাদেবী পুরনো দিনের এক বিখ্যাত গায়কের নিকট আত্মীয়া। মায়ের কাছেই বাপ্পার গানের শিক্ষার শুরু। শেওড়াফুলিতে নিজেদের বাড়ি ছিল। নিজে রিষড়ার একটা বাংলা ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্তও ছিল। ২০১৬-র সারেগামাপা-র অডিশনের প্রথম রাউন্ডে দ্বিতীয় হয়েছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডের অডিশনের জন্য পুজোর সময় যেদিন ডাক এল সেদিন বাপ্পার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যু জীবনের সমস্ত কিছুকে ওলটপালট করে দেয়। গান গাওয়ার পাশাপাশি বাপ্পা গ্রিল তৈরি ও ইলেকট্রিকের কাজও করত। অভাবের সংসারে শেওড়াফুলির বাড়ি বিক্রি করে বাপ্পার মা প্রথমে কোন্নগর, পরে ত্রিবেণীতে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। বাপ্পা এরপর লেবারের কাজ করতে গিয়ে সঙ্গদোষে নেশা শুরু করে, অসামাজিক লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে।
ছেলের এই অসামাজিক কাজকর্ম মেনে নিতে না পেরে তাকে তাড়িয়ে দেন মা। তারপর থেকেই ত্রিবেণী স্টেশনে রাত কাটানো শুরু করে সে। ত্রিবেণী স্টেশনে এক ব্যক্তির মোবাইল চুরি করার অপরাধে বাপ্পা ব্যান্ডেল জিআরপির হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পর হঠাৎই বাপ্পার গলায় জগন্ময় মিত্রের ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’ সেই বিখ্যাত গানটি শুনে চমকে ওঠেন জিআরপির ওসি সুরেশ ভৌমিক। মুহূর্তের মধ্যে অফিসের গোটা পরিবেশ বদলে যায়। বাপ্পাকে জিজ্ঞাসা করে তার অতীত সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে জিআরপি।
[দেশের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় ৮ নম্বরে পতঞ্জলির সিইও]
পুরো বিষয়টি জানার পর এসআরপি হাওড়ার নির্দেশে ব্যান্ডেল জিআরপি তাকে ব্যারাকে রেখে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আজ সফল। ওসি সুরেশ ভৌমিক ও জিআরপির কর্মীরা তাকে ব্যারাকে রেখে তার নেশা ছাড়ানো এবং কাউন্সেলিং শুরু করেন। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় আর দশ জনের মতো তারও সমাজের কিছু দেওয়ার আছে। সকলের ভালবাসার বিনিময়ে সেও কখনও শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আবার কখনও জগন্ময় মিত্রের পুরনো দিনের সেই বিখ্যাত গানগুলি গেয়ে সকলের মন ভাল করার চেষ্টা করে। এখন তার একটাই লক্ষ্য সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.