দীপঙ্কর মণ্ডল: ২০০৫ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর খেজুরি আর নন্দীগ্রাম ছিল পরস্পরের শত্রু। সেই শত্রুতা গড়িয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে। তালপাটি খালের এপার থেকে ওপারে যেতেন না কেউ। কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল দু’পাড়ের বাসিন্দাদের। করোনাই (Corona Virus) এবার কাছে এনে দিল খেজুরি ও নন্দীগ্রামের সেই মানুষদের। আর এই সংকটকালে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি অংশ। হাতে তুলে দিল ত্রাণ সামগ্রী।
করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে জারি লকডাউন। জরুরি পরিষেবা ছাড়া বন্ধ সবকিছু। যার ফলে প্রবল সমস্যায় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা। কারণ, যেটুকু টাকা হাতে ছিল প্রথম কয়েকদিনেই তা শেষ। তাই ত্রাণ সামগ্রী না পেলে হাঁড়ি চড়ছে না। এমনই অবস্থা পূর্ব মেদিনীপুরের তালপাটি খালের দু’পাড়ের প্রায় দেড়শো পরিবারের। তাঁদের কথা ভেবেই এগিয়ে এলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা) ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি অংশ। দুস্থদের জন্য চাল, ডাল, আলু, সোয়াবিন, মুড়ি, সাবান, গুঁড়ো সাবান, বিস্কুট থেকে শুরু করে মাস্ক-সবকিছুই পাঠালেন তাঁরা। রবিবার খেজুরি ও জাহানাবাদে ক্যাম্প করে খেজুরি সৎসঙ্গ আশ্রমের তরফে বিতরণ করা হল সেই সামগ্রী।
এ প্রসঙ্গে খেজুরি সৎসঙ্গ আশ্রমের সভাপতি মেঘনাথ মণ্ডল বলেন, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি অংশ এবং স্কুল শিক্ষকরা মিলিতভাবে এই মানুষদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছেন, দূরত্ব বজায় রেখে সেগুলিই সকলের হাতে তুলে দেওয়া হল। বহু বছর পর এক জায়গায় হলেন খেজুরি ও নন্দীগ্রামের মানুষ।” তবে শুধু রবিবার নয়, শেষ সাতদিন ধরেই অভাবী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁরা, বললেন খেজুরি বন্দর সৎসঙ্গ আশ্রমের সম্পাদক সর্বেশ্বর মণ্ডল। সেই সঙ্গে সহযোগিতা পেলে লকডাউন যতদিন জারি থাকবে ততদিনই খাদ্যসামগ্রী বিলির আশ্বাস দেন তিনি। খেজুরি-নন্দীগ্রামের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে বলেন, “এক সময় প্রতিদিন শুধু গুলির শব্দ শুনতে পেতাম। খেজুরি-নন্দীগ্রামের সীমা পেরনো যেত না। এপার থেকে ওপারে বা ওপার থেকে এপারে আসা নিষিদ্ধ ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লড়াই থেমেছে। তবে অস্বস্তি থেকে গিয়েছেই। তবু এই করোনা আবহে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে দু’পাড়ের সম্পর্ক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.