সুমন করাতি, হুগলি: হুগলি (Hooghly) জেলার কোন্নগরের নবগ্রাম থেকে নাসা। পথ মসৃণ না হলেও সব বাধা উপেক্ষা করে দেশবাসীর মুখ উজ্জ্বল করলেন বঙ্গসন্তান। কোন্নগরের নবগ্রামের বাসিন্দা বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায়। হুগলির ছেলেকে এবছর NASA-JPL অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করল নাসা (NASA) কর্তৃপক্ষ।
হুগলি জেলার নবগ্রামে অ্যাসবেস্টারের ছাউনির ঘর। সব সময় জুটত না পেট ভরা খাবারও। ছয় ভাই বোনের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন বাবা। তবে পেটে খিদে নিয়েও এক গৌতম চট্টোপাধ্যায় স্বপ্ন দেখতেন আকাশে ওড়ার। তাঁর উড়ান হয়েছে স্বপ্নের মতোই। এবার পৌঁছলেন নাসায়। মার্কিন মলুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানালেন তাঁর ছেলেবেলার গল্প। কোন্নগর স্টেশনের কাছে ছোট্ট ঘর। বাবা সুনীলরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সরকারি চাকরি করতেন। ছোটবেলায় প্রথমে শিশুভারতী স্কুল এর পর বিদ্যাপীঠ স্কুলে পড়াশোনা। হ্যারিকেনের আলোয় চলত পড়াশোনা। তবে কোনও কিছুই আটকে রাখতে পারেনি মেধাবী গৌতমকে। ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনার পর টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে যোগ দেন তিনি। শেষে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা ক্যালটেক। তার পরই আসে নাসা থেকে ডাক। ১৯৯৯ সালে গৌতমবাবু যোগ দেন নাসায়। আমেরিকায় স্ত্রী কন্যা নিয়ে থাকেন গৌতম। বাবা মারা গিয়েছেন। মা সাধনা চট্টোপাধ্যায় কোন্নগর ক্রাইপার রোডের এক আবাসনের বাসিন্দা। শত ব্যস্ততা থাকলেও প্রায় সময় পেলেই কোন্নগর নিজের পরিবারের কাছে সময় কাটাতে চলে আসেন গৌতমবাবু।
গৌতম বাবুর এই সাফল্যের খবরে খুশির হওয়া গৌতমবাবুর দিদি, মা ও ভাইদের মধ্যে। সকলেই এখন তাকিয়ে তাঁদের ছেলে গৌতম কবে নোবেল পাবেন। পরিবারের প্রত্যেকেই এখন বলছেন, এই গর্ব শুধু তাঁদের কোন্নগর নবগ্রাম বা হুগলি জেলার নয় এই গর্ব দেশের। ভাই গৌতমের এই সাফল্যে দিদি রূপালী ভট্টাচার্য বলেন, তাঁদের খুব কষ্ট করে বড় হতে হয়েছে। গৌতম ছোট থেকেই পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধুলায় খুব ভালো। গৌতম যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তেন তখন থেকেই ওঁর বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক। ইচ্ছা ছিল নাসা যাওয়ার। গৌতম বাবুর মা সাধনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছেলেকে ছোট থেকেই দেখছি, এখন ও অনেক বড় মানুষ। কিন্তু মাটির মানুষ। সময় পেলেই সকলের সঙ্গে সময় কাটাতে বাড়ি চলে আসে। ছেলের সাফল্যে কোন মা না খুশি হবে, আমিও খুব খুশি।” গৌতমবাবুর ছেলেবেলার কৃতি মাধব ভট্টাচার্য বলেন, “গৌতম ছোট থেকেই পড়াশোনা ছাড়া খেলাধুলায় খুব ভালো। ক্রিকেট ফুটবল সব কিছুতেই পারদর্শী। আজ বন্ধু এতো বড় একটা জায়গা থেকে পুরস্কার পেয়েছে, এটা গর্বের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.