সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: নিম্নচাপের হাত ধরে হিমাঙ্ক নেমেছে কুড়ির ঘরে। হিমেল পরশে রাজ্যবাসী অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। ইতিমধ্যে মা দশভূজা ফিরে গিয়েছেন কৈলাসে। লক্ষ্মীদেবীও তাঁর ঝটিকা সফর সেরে নিয়েছেন। আর কদিন পরেই শক্তিরূপিণী শ্যামা মায়ের আগমন বার্তা আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে চলেছে। শ্যামা মায়ের কৃষ্ণাঙ্গ সুসজ্জিত করার জন্য বনে বনে রক্ত জবার রাশি রাশি হাসি ছড়িয়ে পড়ছে। এ যেন নীরবে মায়া-তরুর বাঁধন টুটে মায়ের পায়ে লুটে পড়ার জন্য ‘তামসী জবার’ এক অনন্য সাধনা। সেই সাধনা সফল হলে মুক্তির স্বাদে আনন্দে বিহ্বল হয়ে উঠবে তামসী জবা। রঙিন হয়ে উঠবে আরও অগণিত ‘মলিন চিত্তদল।’ “তার গন্ধ না থাক যা আছে সে নয়রে ভুয়ো আভরণ।”
আগামী মঙ্গলবার হেমন্ত রজনীতে শ্যামা মায়ের বোধনে সারা রাজ্য জুড়ে কয়েক কোটি রক্ত জবার প্রয়োজন হবে। অন্যান্য বারের থেকে এবারে জবার উৎপাদন কিছুটা বেশিই। ভিনরাজ্যে দিওয়ালি উৎসবের জন্য এ রাজ্য থেকে জবা ফুল রপ্তানি করা হয়। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে ফুল চাষিরা জানিয়েছেন। উৎপাদন বেশি হওয়ায় এই মুহূর্তে জবার দাম অপেক্ষাকৃত কম। তবে পুজোর মুখে এই দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সেই বাড়া দামের ফায়দা ফুল চাষিরা কতটা পাবেন তাই নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফুল ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে অনেক আগেই কম দামে জবা কুঁড়ি কিনে তা হিমঘরে মজুদ করেন। পুজোর সময় তা উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন।
[স্কুলে চাকরি দেওয়ার নামে সাড়ে চার লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ]
সারা রাজ্যে যত জবা ফুল উৎপাদন হয় তার মধ্যে সবথেকে বেশি উৎপাদন হয় হাওড়া জেলার বাগনান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিরাকোলে। অন্যান্য জেলাতেও কমবেশি জবার চাষ হয় বলে জানান সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়েক। তিনি বলেন কালীপুজোর অনেক আগে থেকেই হিমঘরে ফুল মজুদ করা শুরু হয়ে যায়। পুজোর সময় সেই ফুলের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়। উলুবেড়িয়া থানার উত্তর প্রসাদপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় সাঁতরা জানান দিন কয়েক আগেও প্রতি হাজার জবা ফুল মাত্র ১০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। বুধবার এক হাজার জবার দাম ছিল ২০০ টাকা। পুজোর সময় প্রতি হাজার জবা ফুল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিকোতে পারে বলে তিনি জানান। দুর্গাপুজোর সময় অবশ্য প্রতি হাজার জবার দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দিওয়ালির জন্য ভিন রাজ্যে জবা রপ্তানি করেও লাভবান হন ফুল ব্যবসায়ীরা। নারায়ণবাবু জানান, হিম পড়া শুরু হলে জবার উৎপাদন কিছুটা কমে যায়, কুঁড়ির আকারও ছোট হয়ে যায়। কিন্তু চাহিদা থাকার কারণে চাষিরা ভাল দাম পান। অধিক উৎপাদন হলে ফুলের দাম কমে যায়।
এবার জবার জোগান অনেক বেশি থাকায় এখনও পর্যন্ত ফুল চাষিরা সেভাবে লাভবান হতে পারেননি। অনেককেই জলের দরে ফুল বেচে দিতে হয়েছে। তবে যেসব চাষি পুজোর দু-এক দিন আগে ফুল বেচতে পারবেন তাঁরা অবশ্য কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। নারায়ণ বাবু বলেন ফুল সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রার হিমঘর না থাকার কারণে প্রতিবছর ফুল চাষিদের এভাবেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়, তা সে জবাই হোক বা পদ্ম। সেই কারণে চাষিরা ব্যবসায়ীদের হাতে জলের দরে ফুল তুলে দিতে বাধ্য হন। আর চাষিদের কাছ থেকে সেই ফুল সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীরা তা বহুমুখী হিমঘরে মজুদ করেন। তাতে অবশ্য তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য অনেক সময় ফুল পচেও যায়। বাগনান থানার চরকাঁটাপুকুর, হেলেদ্বীপ, জালপাই, ওড়ফুলি, বাকুড়দহ, বাঁটুল, বৈদ্যনাথপুর, মুগকল্যান, ঘোড়াঘাটা, দেউলটি প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক হারে জবা উৎপাদন হয়। এইসব এলাকার ফুল চাষিরা জানিয়েছেন, ভোরবেলা বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করার পর তা গোচ করে হাওড়ার মল্লিকঘাট ফুল বাজারে পৌঁছাতে হয়। একেক দিন যা দাম পাওয়া যায় তাতে পারিশ্রমিক তো দূরের কথা মল্লিক ঘাট যাতায়াতের খরচই ওঠে না। অনেক সময় উপযুক্ত দাম না পেয়ে চাষিরা বিরক্ত হয়ে সমস্ত ফুল গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে আসেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.