ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজকুমার: হলং বিপর্যয়ের পিছনে কি ষড়যন্ত্র, নাকি শুধুই দুর্ঘটনা, বিস্তারিত তথ্য চান মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র ও বন দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে তার জন্য যৌথ তদন্ত শুরু করতে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে পরশু হলং যাচ্ছেন বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। তার আগে বুধবারই স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং বন দপ্তরের আধিকারিকরা এ নিয়ে তদন্তে নেমে পড়েছে। তদন্ত শুরু করেছে ফরেনসিক দলও। ইতিমধ্যে অকুস্থলে পৌঁছেছেন প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায়। দপ্তরের সচিবকে ডেকে পাঠিয়ে বুধবার প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪ সদস্যের বন দপ্তরের কমিটি প্রাথমিক রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। বনমন্ত্রী নিজেও মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিয়েছেন। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যেক মুহূর্তের আপডেট চেয়েছেন মমতা। বলে দিয়েছেন তদন্তে কোথাও কোনও ফাঁক রাখা চলবে না।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরে থাকা কাঠের এই বাংলোটিতে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় গোটা বাংলো। কীভাবে আগুন লাগলো? ঠিক কী ঘটেছিল ওই রাতে? তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করলেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। কমিটিতে রয়েছেন মুখ্য বনপাল, ডিএফও, ওই বাংলো এলাকার ফরেস্ট রেঞ্জার-সহ বেশ কয়েকজন। এদিন দুপুরে সল্টলেকে বনবিভাগের দপ্তরে বৈঠকে বসবে এই কমিটি। প্রয়োজনে আগামিকালই ঘটনাস্থলে যাবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এবিষয়ে বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “অনেকেই বন দপ্তরের কর্মীদের দিকে আঙুল তুলছেন। যারা এই অভিযোগের আঙুল তুলছেন তাদের বিরুদ্ধে আমি দাঁড়াব। কারণ এই বনকর্মীরাই বুক দিয়ে সবটা আগলে রাখেন। কী কারণে এই ঐতিহ্যশালী বাংলোর ক্ষতি হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ঐতিহ্যশালী এই বনবাংলোকে আবার তার পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে আগুনে বন্যপ্রাণের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে খবর। কিন্তু কিভাবে এই শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ১৫ জুন থেকে তিন মাসের জন্য বন রাজ্যের সংরক্ষিত সব বনাঞ্চল বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় পর্যটকহীন ছিল আট কামড়ার দ্বিতল ঐতিহ্য সম্পন্ন বন বাংলো। ফলে সেখানে খুব বেশি বিদ্যুতের ব্যবহারও হচ্ছিল না। তাহলে রাতের বর্জ বিদ্যুতের জেরেই শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটল হলং বাংলোতে? তা যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা স্বিকার করেছে দমকল ও বিদ্যুৎ দপ্তর। তবে যে কারণেই হোক বাংলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল বলেই মনে করছে দমকল বিভাগ। আলিপুরদুয়ার দমকল কেন্দ্রের ওসি ভাস্কর রায় বলেন, “যে কারণেই হোক প্রথমে আগুন ছোট অবস্থাতেই ছিল। তা নেভানোর ব্যবস্থা করতে পারলে এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও যেতে পারত। কারণ দমকলের গাড়ি পৌঁছাতে বেশ কিছু সময়তো লেগেইছে । দমকলের তিনটে ইঞ্জিন ও দুটো পাম্প রাতভর কাজ করেছে। কিন্তু কাঠের বাংলো হওয়ায় তা রক্ষা করা যায় নি। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। এই মুহূর্তে কীভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল তা বলা সম্ভব নয়।”
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে মঙ্গলবার রাত নয়টা নাগাদ এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। জঙ্গলের কোর এলাকায় এই বন বাংলোর কাছেই রয়েছে গণ্ডারের সল্ট পিট। যেখানে গন্ডারদের খাবার লবণ ও অন্যান্য কিছু দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই বনের ভেতর এত বড় অগ্নিকান্ডে বন্যপ্রানীরা হতচকিত হয়ে এদিক ওদিক ছুটো ছুটি করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বন দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন বন্যপ্রাণীর কোন ক্ষতি হয় নি। রাত নয়টা আগুন লাগার পরেই প্রথমে স্থানীয় বনকর্মীরা তা নেভানোর চেষ্টা করেছেন। রাত ১০ টা ১০ মিনিট নাগাদ হাসিমারা ও ফালাকাটা থেকে সমকলের দুটো ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় । ফালাকাটার দমকলের গাড়ি কাঠের সরু ব্রীজ পার করে হুলং বাংলোতে পৌঁছাতে বেগ পায়। কার্যত গাড়ি থামিয়ে মোটর বাইকে করে ঘটনাস্থলে পৌছান ফালাকাটা দমকল কেন্দ্রের বনকর্মীরা। পরে সেই ইঞ্জিনও ঘটনাস্থলে পৌঁছায় । এর পর আলিপুরদুয়ার দমকল কেন্দ্র থেকেও একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় । সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মাঝ রাতের মধ্যেই দেশ বিদেশে বিখ্যাত হলং বনবাংলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
যেসময় এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তখন লোড শেডিং ছিল বলেও কেউ কেউ দাবি করছেন। তবে এই তথ্যের সত্যতা স্বিকার করেন নি স্থানীয় বন কর্তারা। ফলে নাশকতার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। তবে কারণ যাইহোক চোখের সামনে রাজ্যের অহংকার ঐতিহ্য সম্পন্ন এই বনবাংলো পুড়ে যাওয়ার ছবি দেখে রাতে অনেকেই ঘুমোতে পারেননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.