বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা…’, শুনলেই যেন চারপাশে দুর্গাপুজোর আবহ টের পাওয়া যায়। কানে বাজতে থাকে ঢ্যাং কুড়াকুড় ঢাকের বাদ্যি। যদিও এবারের বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর এখনও প্রায় আড়াই মাস বাকি। তবে প্রায় প্রতি বছরই শ্রাবণ মাসের শুরু থেকেই কার্যত শুরু হয়ে যায় বাঙালির দিন গোনা। দুর্গাপুজোর আয়োজনের ভাবনা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন অনেক পুজো কমিটির উদ্যোক্তা।
রথযাত্রার সময় খুঁটি পুজো হয়েছে৷ জাঁকজমকের আতিশয্যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে ভরিয়ে তুলতে কোমর বেঁধে নামার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন অনেকেই। কিন্তু যাঁদের হাত দিয়ে পূজিতা হন দেবী দুর্গা, সেই ব্রাহ্মণ পুরোহিতরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? শাস্ত্রীয় বিধান মেনে দুর্গাপুজোর রীতিনীতিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভুলভ্রান্তি শুধরে কীভাবে আরও নিখুঁত করে তোলা যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে পুরোহিতরা। আর তাতে পিছিয়ে নেই নদিয়া জেলার নব পুরোহিত সমাজও। মাতৃরূপেণ, শক্তিরূপেণ দেবী দুর্গার পুজো পদ্ধতি জানার জন্য এবং আরও নিখুঁতভাবে পুজো করার জন্য তাঁদের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল পূজাপাঠের তিনদিনের প্রশিক্ষণ শিবির।
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়ার ভারত সেবাশ্রম সংঘের হিন্দু মিলন মন্দিরে আয়োজন করা হয়েছিল দুর্গাপুজোর প্রশিক্ষণ শিবিরের। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ওই প্রশিক্ষণ শিবির চলবে শুক্রবার অবধি। ওই শিবিরের অংশ নিয়েছিলেন পৌরহিত্যের কাজে যুক্ত পঞ্চাশ জনেরও বেশি পুরোহিত। নব পুরোহিত সমাজের ওই শিবিরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন কলকাতা ব্রাহ্মণ সমাজের হয়ে পণ্ডিত শিবেশ্বর চক্রবর্তী ও ভবতারণ ভট্টাচার্য। শিবিরে এসেছিলেন কুমুদকান্ত সংস্কৃত বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা। ওই শিবিরের যোগদানকারী পুরোহিতদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, দুর্গাপুজো তাঁরা এর আগে করেছেন ঠিকই। কিন্তু অনেক নিয়মকানুনই তাঁদের অজানা ছিল এতদিন। শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী, রীতিনীতি মেনে দুর্গা পুজো নিখুঁতভাবে কী করে করা যায়, তা তাঁরা শিখলেন প্রশিক্ষণ শিবির থেকে।
কলকাতা ব্রাহ্মণ সমাজের পণ্ডিত শিবেশ্বর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘কেন দুর্গাপুজো করা হয়, কীভাবে দুর্গাপুজো করতে হয়, দুর্গাপুজোর বোধন বা অষ্টমীর সন্ধিপুজো নিয়মটাই বা কী, কেন দুর্গাপুজোতে পতিতা পল্লির মাটি প্রয়োজন হয়, এইরকম অনেক কিছুই হয়ত অজানা থেকে যায় পুরোহিতদের কাছে। বিশুদ্ধ সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ কীভাবে করা উচিত, কী কী বিধিনিষেধ মেনে পুজো করতে হবে, এইরকম দুর্গাপুজোর নিয়ম কানুন ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে পুরোহিতদের।’ নব পুরোহিত সমাজের নদিয়া জেলার পক্ষে শম্ভুনাথ মৌলিক বলছেন, ‘দুর্গাপুজোর এখনও প্রায় আড়াই মাস বাকি। তার আগে নিখুঁতভাবে দুর্গাপুজো সম্পন্ন করার জন্য পুরোহিতদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। শিবির থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পুরোহিতরা যদি সম্পূর্ণ নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে নিখুঁতভাবে দুর্গাপুজো সম্পন্ন করেন, তবেই আমাদের এই শিবিরের উদ্দেশ্য সফল হবে৷’
রীতিমত বই পড়ে, কাগজ কলমে লিখে, বিশুদ্ধভাবে সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের পদ্ধতি জানার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শিবিরের যোগদানকারী পুরোহিতরা। ওই পুরোহিতদের মধ্যে অনিল মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব চক্রবর্তীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এই শিবিরে এসেই জানতে পারলেন বহু খুঁটিনাটি তথ্য৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.