কালীনগর বটতলা বারোয়ারির প্রতিমা। এই প্রতিমার সামনে আরতি করতে করতেই মৃত্যু পুরোহিতের।
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: একদিনের জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে আচমকাই শোকের ছায়া নামল কৃষ্ণনগরে। নবমীর পুজো শেষে আরতি করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন পুরোহিত। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কালীনগরের বটতলা বারোয়ারি আমরা কজন ক্লাবের পুজোয়। মৃত পুরোহিতের নাম পরেশ ভট্টাচার্য (৫৫)। ক্লাবের অদূরেই তাঁর বাড়ি। এদিন নবমীর পুজোর শেষে ধুনুচি নিয়ে আরতি করছিলেন তিনি। সেই সময়ই আচমকা প্রতিমার পায়ের সামনে লুটিয়ে পড়েন। ধুনুচির আগুন ছিটকে পড়ে তাঁর গায়ে। ঘটনার অভিঘাতে উপস্থিত দর্শনার্থীরা প্রথমে হকচকিয়ে যান। তারপর পরেশবাবুকে উদ্ধার করে মণ্ডপের বাইরে নিয়ে আসা হয়। মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা হলেও কোনও সুফল মেলেনি। অচেতন পুরোহিতকে তড়িঘড়ি কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এহেন মর্মান্তিক ঘটনায় কার্যতই বাকরুদ্ধ পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।
জানা গিয়েছে, আমরা কজন ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো এবার ৩৭ বছরে পড়েছে। মৃত পরেশবাবু গত ১৫ বছর ধরে এই ক্লাবের পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব সামলেছেন। এবারও তার অন্যথা হয়নি। এমনিতেই কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো একদিনে হয়। এদিন ভোর ছটা নাগাদ সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজো হওয়ার কথা ছিল। পরেশবাবু একে একে সপ্তমী, অষ্টমীর পুজো শেষ করে ভালভাবে নবমীর পুজো শুরুও করেছিলেন। পুজোর পর তখন ধুনুচি নিয়ে আরতিও শুরু করছিলেন পুরোহিত। আরতি করতে করতেই ঘটে বিপত্তি।
এদিকে পুজো চলাকালীন পুরোহিতের আচমকা মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়। আমরা কজনের পুজোও সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পুরোহিত অচেতন হয়ে গিয়েছেন, খবর পেতেই মণ্ডপের সামনে থাকা ঢাকের বোল বন্ধ হয়ে যায়। মাইকেও সেই সময় যন্ত্রসঙ্গীত বাজছিল, তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সদস্যরা ততক্ষণে ক্লাবের মাথায় কালো পতাকা তুলে দিয়েছেন। পুজোমণ্ডপে লোকজনের ভিড় থাকলেও সবাই যেন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন। ক্লাবের সম্পাদক দেবব্রত দত্ত বলেন, ‘এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের ক্লাবে আগে কখনও ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে কি যে করা উচিত, বুঝতে পারছি না। আপাতত পুরোহিত পরেশবাবুর মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্লাবের ছাদে কালো পতাকা তোলা হয়েছে। তবে নবমী পুজো হয়ে যাওয়ায় কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। কিন্তু এখনও দশমীর পুজো তো বাকি, তাই সেসব কাজকর্ম সারতেই নতুন পরোহিতের খোঁজ চলছে।’
পুরোহিতের কাজই ছিল পরেশবাবুর পেশা। আচমকা মৃত্যুতে একপ্রকার সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ল তাঁর পরিবারটি। এমনিতে খুব একটা সুস্থও ছিলেন না পরেশবাবু। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন। বার দুয়েক স্ট্রোকও হয়ে গিয়েছে তাঁর। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ওষুধ খেতেন। এদিন ভোর থেকে পুজো শুরু হওয়ায় হয়তো ভিতরে ভিতরে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন, তারপর আরতির সময় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যায়।
ছবি: সঞ্জিৎ ঘোষ
[ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি থেকে অস্ত্র পাচারে গ্রেপ্তার লরিচালক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.