দীপঙ্কর মণ্ডল: এ যেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। লকডাউনের ঠিক আগের মুহূর্তে আতঙ্ক ছুঁয়েছে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে। পৃথক থাকলে, ভাল থাকা যাবে। এই সোশ্যাল আইসোলেশনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে কয়েকদিনের লকডাউন দেশজুড়ে। তবে এই মুহূর্তে করোনা আতঙ্ককেও ছাপিয়ে গেল অন্য একটি সংকট। ক’টা দিন গৃহবন্দি থাকবেন সাধারণ মানুষ, যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আগাম সংগ্রহ করে রাখার তোড়জোড়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সোমবার সকালে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারগুলি প্রায় আগুন। দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে বিকলো সবজি। চলল দেদার কালোবাজারি।
মানিকতলা বাজার, কলেজ স্ট্রিট বাজার থেকে শুরু করে উত্তর কলকাতা ছোট-বড় সব বাজারে গিয়েই চক্ষুচড়কগাছ ক্রেতাদের। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাজারে গিয়েও দেখা গেল, পড়ে রয়েছে গুটি কয়েক সবজি। দিন দুই আগেও যে টমেটোর দাম ছিল কেজি প্রতি ২০ টাকা, আজ তার দাম ৫০ টাকা। কাঁচালঙ্কার দাম ৮০ থেকে একলাফে হয়ে গিয়েছে ১২০ টাকা। অন্যান্য সবজির দাম তো কথাই নেই। চাল, ডাল, আলু – এগুলোই মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলির নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। অথচ সেসবের দামও বহু। খোলা বাজারে চাল এবং আলুর দাম বেড়ে গিয়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও মিলছে না ভাল মানের চাল, আলু। বেড়েছে দুধ, পাঁউরুটির মতো খাবারের দামও। আর আশ্চর্যজনকভাবে, সেই দামেই বিকিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাজার প্রায় ফাঁকা। দোকানিরা সাফ বলে দিচ্ছেন, “নিতে হয়, নইলে আসুন।”
একে লকডাউন সিদ্ধান্তে ভয়ে কাঁটা আমজনতা। তারউপর, কালোবাজারিদের অত্যাচার। জোড়া ফলায় লকডাউনের আগেই দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তারই মধ্যে বাজারের ভিড়ে সংক্রমণ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। প্রথমত, এতজন মানুষ একসঙ্গে একই জায়গায়। দ্বিতীয়ত, একাধিক হাত ঘুরে বাজারে সবজি এসেছে। অধিকাংশ ক্রেতা, বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতাদের পরপর জিনিস দিতে গিয়ে একঘণ্টা অন্তর হাত ধোয়ার বালাই থাকছে না। এঁরা কতটা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ। হালকা সর্দি-কাশি লেগে আছে অনেকের। ফলে যে কোনও ভাবে সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা।
দিন কয়েকের বাজার তুলে বাড়ি ফেরার পরও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে কোথায়? সকলেরই মনে খচখচানি থাকছে, বাজার থেকে কিছু হবে না তো! আর তারই ফাঁক গলে কয়েকগুণ দামে জিনিস বিক্রি করে বাড়তি টাকা পকেটে নিয়ে চললেন জনা কয়েক বিক্রেতা। একটা আতঙ্ক এভাবেই নানা দিক থেকে সমাজের একটা বড় শ্রেণিকে অসহায় করে তুলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.