বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: উঠেছিল প্রসব যন্ত্রণা। কিন্তু, হাসপাতালের চিকিৎসক সেটিকে মাথার যন্ত্রণা ভেবেছিলেন। তাই প্রসূতিকে মাথার সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দিয়ে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার করলেন জেলা হাসপাতালে। যদিও জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জানা গেল, মাথার যন্ত্রনা নয় ওটা আসলে প্রসব যন্ত্রণা। ঘটনা নদিয়ার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের৷ ফের ওই প্রসূতিকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভরতি করার পরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এদিকে সন্তানের পিতা হওয়ার পরেও আনন্দের বদলে একরাশ ক্ষোভ জমেছে তাঁর স্বামীর মনে। তাই শিশুটির জন্মের পরে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি তিনি। পুরো ঘটনাটি লিখে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার শান্তিপুরের সুত্রাগড় এলাকার উত্তর মাঠপাড়ার বাসিন্দা সাধন সরকারের স্ত্রী অণিমা গর্ভবতী ছিলেন। গত শুক্রবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল তাঁর। এরপর শনিবার ভোরে তাঁকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভরতি করতে নিয়ে যান সাধনবাবু। কিন্তু, ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা এক চিকিৎসক অণিমাদেবীর সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন। কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে রেফারও করে দেন। কিন্তু, সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান মাথার য্ন্ত্রণা নয়, প্রসব যন্ত্রণাই হচ্ছে অণিমা দেবীর। পরে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে যাওয়া হলে রবিবার সকালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপরই ওই
অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন সাধন সরকার। বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হতেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে নদিয়া জেলাজুড়ে।
সাধনবাবুর অভিযোগ, “আমার স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল। তাই গত শনিবার ভোর চারটে নাগাদ শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। অথচ জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন চিকিৎসক আমার স্ত্রীর মাথার যন্ত্রণা ভেবে সিটি স্ক্যান লিখে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু, সেখানকার চিকিৎসকেরা আমাকে জানান, স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা উঠেছে। তাই শক্তিনগরের বদলে আমার স্ত্রীকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভরতি করার পরামর্শ দেন। সেখানে আমার স্ত্রী একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। শান্তিপুর হাসপাতালের ওই চিকিৎসক প্রসব যন্ত্রণাকে কীভাবে মাথার যন্ত্রণা ভেবে সিটি স্ক্যান করাতে বললেন, সেটাই মাথায় ঢুকছে না। ওনার জন্য আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে তিনটি হাসপাতাল ঘুরতে হল। এর ফলে আমার স্ত্রী এবং সন্তানের কোনও ক্ষতি হতে পারত। আমি এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ওই চিকিৎসককে শাস্তি দেওয়ার দাবি করছি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছি।”
এপ্রসঙ্গে শান্তিপুর হাসপাতালের সুপার ডাঃ জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “সাধারণত প্রসূতির ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেওয়াটা ঠিক নয়। আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। এর ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করে তদন্তও শুরু হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে রিপোর্টও জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.