শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: নির্দয়, অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল রায়গঞ্জ। এক অসুস্থ, গর্ভবতী, মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে চুপিসারে রাতের অন্ধকারে কুলিক নদীর পাড়ে ফেলে রেখে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনা জানাজানি হতে তুমুল শোরগোলের পর অবশেষে স্থানীয় যুবকরা তাঁকে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভরতি করেছেন। তবে এটা কাদের কাজ, শুক্রবার সন্ধে পর্যন্তও সেই রহস্য উদঘাটিত হয়নি। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে ১১টা নাগাদ ৩৪ নং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন কুলিক নদীর ধারে আবদুলঘাটার কাছে গ্যারেজ কর্মীরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন। আচমকাই তাঁদের খেয়াল পড়ে, অদূরে এক আবর্জনা স্তূপ থেকে অস্ফুট গোঙানির শব্দ আসছে। তাঁরা এগিয়ে যেতেই দেখতে পান, এক শীর্ণকায়া মহিলা ফিনফিনে, অপরিষ্কার একটি কাপড় জড়িয়ে ছটফট করছেন। কিছুক্ষণ পর বোঝা যায়, তিনি সন্তানসম্ভবা। আর তা জানার সঙ্গে সঙ্গেই কৌতূহলী মানুষজনের ভিড় বাড়তে থাকে।
প্রায় ঘণ্টা দুয়েক তাঁকে ঘিরে নানা আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে। যদিও কেউই এমন অসহায় অবস্থা থেকে মহিলাকে উদ্ধার করা নিয়ে ভাবিত হননি। শেষপর্যন্ত স্থানীয় কয়েকজন যুবক ভিড় ঠেলে মহিলাকে উদ্ধার করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ওই যুবকরাই সোজা মহিলাকে নিয়ে যান রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানকার স্ত্রীরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন তিনি। তখনও তিনি নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি।
শুক্রবার সকালে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, দুষ্কৃতীদের লালসার শিকার হয়েই তাঁর এমন অবস্থা। তবে নিজের নামও বলতে না পারায় হাসপাতালের রোগী হিসেবে তাঁকে নথিভুক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা করতেও বেজায় বিপাকে পড়ছে কর্তৃপক্ষ। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ সুরজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক অজ্ঞাত পরিচয় সাত মাসের গর্ভবতী মহিলা স্ত্রীরোগ বিভাগে ভরতি হয়েছেন। ওই গর্ভবতী মহিলার নাম, ঠিকানা জানার জন্য রায়গঞ্জ থানার পুলিশের সাহায্য চেয়েছি।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গাইনি বিভাগের চিকিৎসকের কথায়, “ওই গৃহবধূ সাত মাসের গর্ভবতী, হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু মানসিক রোগও রয়েছে তাঁর।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বিহারের বারসই এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা। তবে তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলেনি এখনও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.